Home প্রবন্ধ মহাকুম্ভে মনালিসার সৌন্দর্যে মুগ্ধ নেটদুনিয়া, অন্ধকারে পারধি সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও সংগ্রাম

মহাকুম্ভে মনালিসার সৌন্দর্যে মুগ্ধ নেটদুনিয়া, অন্ধকারে পারধি সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও সংগ্রাম

 মহাকুম্ভ মেলায় ১৬ বছর বয়সী মোনালিসা তাঁর সৌন্দর্য ও সরলতার জন্য সবার নজর কেড়েছেন। তবে তাঁর পরিচিতি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি ভারতের পারধি সম্প্রদায়ের সদস্য, যা একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের অধিকারী। সেই পারধি সম্প্রদায়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।

পারধি সম্প্রদায়ের পরিচিতি

পারধি শব্দটি এসেছে মারাঠি শব্দ ‘পারধ’ থেকে, যার অর্থ ‘শিকার’। প্রাচীনকালে পারধিরা শিকারি ও বনবাসী হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদের উদ্ভব মূলত রাজস্থান থেকে, এবং তারা হিন্দু ধর্মের শাক্ত প্রথা ও রীতিনীতির অনুসারী। তাদের সংস্কৃতি গুজরাটি এবং রাজস্থানী সংস্কৃতির মিশ্রণ, যা রাজপুত সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তারা মৌলি মাতা, কালিকা মাতা, সপ্তশ্রুঙ্গী মাতা, ভাদেখান মাতা এবং খোডিয়ার মাতাকে তাদের কুলদেবী হিসেবে পূজা করে। দশেরা তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যেখানে তারা কুলদেবীদের খুশি করার জন্য পশু বলি দেয়, যা পরে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ১৮৭১ সালের ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্টের মাধ্যমে পারধি সহ অনেক যাযাবর সম্প্রদায়কে ‘অপরাধী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই আইন তাদের সামাজিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। ১৯৫২ সালে ভারত সরকার এই আইন বাতিল করে এবং এই সম্প্রদায়গুলিকে ‘ডিনোটিফাইড’ ঘোষণা করে। তবে, তাদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও অবহেলা আজও রয়ে গেছে

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে পারধি সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য দারিদ্র্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব, এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার। মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার ফানসে পারধি সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল, যা ২০২১ সালের জুন মাসে সমৃদ্ধি মহামার্গ প্রকল্পের জন্য ভেঙে ফেলা হয়। এটি তাদের শিক্ষার সুযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

কোভিড-১৯ অতিমারির সময়, পারধি সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য জীবিকা হারিয়েছেন এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাবে ভুগছেন। তাদের অনেকেই কাঁচা ঘরে বসবাস করেন, যা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।

মনালিসার মতো তরুণীরা পারধি সম্প্রদায়ের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। তবে, এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা আজও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাদের প্রতি বিদ্যমান পূর্বাগ্রহ দূর করে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করে তাদের উন্নয়নে সহায়তা করা। তাহলেই মনালিসার মতো আরও প্রতিভাবান তরুণীরা তাদের সম্ভাবনাকে পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত করতে পারবে।

মনালিসার জীবনে সামাজিক মাধ্যম কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে আরও জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন:

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version