রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবিত মার্কিন বিল নিয়ে গভীর নজর রাখছে ভারত। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানালেন, এই বিল কার্যকর হলে তার প্রভাব কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখবে ভারত। পাশাপাশি ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও স্বার্থের কথা ইতিমধ্যেই আমেরিকার নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ওই প্রস্তাবিত আইন সংসদে পেশ করেন। এই বিল অনুযায়ী, যে কোনও দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম বা অন্যান্য পণ্য আমদানি করলে তাদের পণ্যের উপর আমেরিকা ৫০০% পর্যন্ত শুল্ক বসাবে। ইতিমধ্যেই ৮০ জনেরও বেশি সিনেটর এই বিলের সহ-সমর্থক বলে জানা গিয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে লিন্ডসে গ্রাহামের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছি। আমাদের দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতও এই ইস্যুতে যোগাযোগ রেখেছেন। ভারতের স্বার্থ এবং বিশেষ করে জ্বালানি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা তাঁকে জানানো হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকেই বিশ্ব জ্বালানি চিত্র বদলে গিয়েছে। ভারত পূর্বে যেখানে রাশিয়া থেকে মোট তেল আমদানির ১ শতাংশেরও কম করত, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০-৪৪ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিল কার্যকর হলে ভারতীয় তেল আমদানির উপর বড় প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রেক্ষিতে আমেরিকা সফরে গিয়ে জয়শঙ্কর জানান, “মার্কিন কংগ্রেসে কী ঘটছে তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে যখন সেটি কার্যকর রূপ নেবে, তখনই আমরা এর প্রভাব বিশ্লেষণ করব।”
জয়শঙ্করের এই সফরে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল দক্ষিণ চিন সাগর। কোয়াড গোষ্ঠীর চার সদস্য দেশ— ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে আলোচনা হয় এই বিতর্কিত সমুদ্র অঞ্চল নিয়ে। জয়শঙ্কর বলেন, “এই অঞ্চলের স্থিতাবস্থা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজাই আমাদের সবার লক্ষ্য।”
চিনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চতুর্দেশীয় কোয়াড গোষ্ঠী একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায়, “আমরা পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বলপ্রয়োগ করে স্থিতাবস্থা বদলের যেকোনও একতরফা প্রয়াসের আমরা কড়া বিরোধিতা করছি।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, যৌথ বিবৃতিতে জলসীমায় ‘জল কামান’ ও ‘র্যামিং’য়ের মতো হানিকর কাজের বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, “এই ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক নৌপরিবহন ও উড়ানের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
আরও পড়ুন: মালিতে অপহৃত ৩ ভারতীয়, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ভারত সরকার