কেরলের নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত রাখল ইয়েমেন প্রশাসন। মঙ্গলবার এই খবর জানিয়েছে সরকারি সূত্রে সংবাদ সংস্থা ANI। মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে নিমিষার ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত সরকারের টানা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং কিছু প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতার হস্তক্ষেপে শেষমেশ মিলল সাময়িক স্বস্তি।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন নিমিষা। ২০২০ সালে আদালতের রায় ঘোষণার পর ২০২৩ সালে চূড়ান্ত আপিলও খারিজ হয়ে যায়। এরপর থেকে ভারত সরকার নিয়মিত ইয়েমেন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনের ধামারে তালাল মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন সুফি নেতা শেখ হাবিব উমর বিন হাফিজের প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত সুন্নি ধর্মগুরু কান্থাপুরম এ পি আবুবকর মুসালিয়ার ওরফে শেখ আবুবকর আহমদের অনুগামীরা।
সূত্র জানাচ্ছে, মাহদি পরিবারের পক্ষ থেকে আলোচনায় যোগ দিয়েছেন হোদেইদা স্টেট কোর্টের মুখ্য বিচারপতি, যিনি ইয়েমেনের শূরা কাউন্সিলের সদস্যও বটে। তিনি শেখ হাবিব উমরের অনুরোধে ধামারে বৈঠকে এসেছেন।
কান্থাপুরমের দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, “ওই প্রতিনিধি নিজেও শেখ হাবিব উমরের সুফি তরিকার অনুসারী এবং এক প্রখ্যাত সুফি নেতার সন্তান। এই পটভূমিতেই মাহদি পরিবারকে রফাসূত্রে রাজি করানোর আশা তৈরি হয়েছে। তিনিই অ্যাটর্নি জেনারেল-এর সঙ্গেও দেখা করবেন যাতে দ্রুত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।”
ভারত সরকার সূত্রের মতে, এ পর্যন্ত সমস্ত আইনি ও কূটনৈতিক সীমারেখা মেনেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ইয়েমেনের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাস না থাকলেও স্থানীয় জেল কর্তৃপক্ষ ও প্রসিকিউটরের অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়েছে, যার ফলেই এ দিন ফাঁসি স্থগিত রাখা সম্ভব হয়েছে।
এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্লাড মানি অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে প্রাণদণ্ড মকুবের সম্ভাবনা। নিমিষা প্রিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব এসেছে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮.৬ কোটি টাকা) মিটিয়ে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের। তবে এখনও পর্যন্ত মাহদি পরিবার সেই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি।
সূত্রের বক্তব্য, “পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জটিল। ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে মধ্যস্থতার প্রয়াসই এখন একমাত্র ভরসা।”
আগামী ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি। তার আগে নিমিষা প্রিয়াকে বাঁচাতে আরও কিছুটা সময় পেল পরিবার ও ভারত সরকার।