ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রথম পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। শান্তির প্রত্যাবর্তন এখনও খুব সহজে সম্ভব নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। দুই দেশের মধ্যে কয়েকবার শান্তি আলোচনা শুরু হলেও তা এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ কী ভাবে শেষ করা যায় এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে কী কী শর্ত প্রয়োজন, সে সবই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এখনও সমাধান সূত্র অধরা
প্রথম গুরত্বপূর্ণ বিষয়টি হল যুদ্ধাবসানে সমস্ত পক্ষের ঐকমত্যে পৌঁছানো। যে কোনো যুদ্ধের সমাপ্তিতেই প্রবল দরকষাকষির ব্যাপার থাকে। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বা আক্রমণকারী দেশ সবসময়ই চাইবে নিজের লাভ-লোকসান পুষিয়ে নিতে। অন্য দিকে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা আক্রমণের নিশানা হওয়া দেশকে স্বার্থত্যাগ করতে হয়। যে কারণে, বারবার শান্তি আলোচনাতেও সমাধান সূত্র অধরাই থেকে যায়। এই মুহুর্তে, রুশ এবং ইউক্রেনীয় যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত উঠে আসছে।
যুদ্ধের মূল্য এবং শান্তির মূল্যে বিশ্বাসও গুরুত্বপূর্ণ। যদি যুদ্ধের খরচ – মানুষের জীবন, অর্থ বা অন্তর্নিহিত কিছু বিষয় যেমন আধিপত্য কায়েম করা সম্পূর্ণ নয়, তবে একটি পক্ষ তার লক্ষ্যগুলির জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। এই যুদ্ধের মানবিক এবং অর্থনৈতিক খরচ রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের জন্যই বিশাল। এ ক্ষেত্রে স্পষ্টতই ইউক্রেনের থেকে অনেক বেশি খরচ করে ফেলেছে রাশিয়া।
৩টি অন্যতম কারণ এবং ফলাফল
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে ফলপ্রসূ শান্তি আলোচনা শীঘ্রই হতে পারে। তবে এমন তিনটি প্রধান বিষয় রয়েছে, যেগুলি এই যুদ্ধের গতি পরিবর্তন করতে পারে। প্রথমত, ২০২২ সালের শরৎকালে ইউক্রেনীয় আক্রমণ রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকটি দুর্বলতা প্রকাশ করেছিল। যদি রুশ সামরিক বাহিনী নড়বড়ে হয়, তবে এটি রাশিয়াকে একটি শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতিতে আলোচনা করতে উৎসাহিত করতে পারে। তবে এরই মধ্যে খবর, ৩ লক্ষ নতুন সেনাসদস্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে রাশিয়া। দেশটির কিছু অস্ত্র তৈরির কারখানায় কাজ চলছে দিনরাত।
দ্বিতীয়ত, ২০২২ সালে বেশ কয়েকটি বড় আক্রমণে ভারী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ। ইউক্রেনীয়দের এই দুর্ভোগ তাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য তাদের সংকল্প এবং তাদের ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে তুলেছে। ইতিমধ্যে যুদ্ধে রুশ সেনার বিরুদ্ধে ইউক্রেন একাধিকবার সুস্পষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। পুনর্দখলে নিয়েছে হারানো কিছু এলাকা ও শহর। ঠেকিয়ে দিয়েছে নিজেদের পরিকাঠামোর উপর মারাত্মক অনেক হামলা। আপাতত, শান্তি চুক্তির মাধ্যমেও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সদিচ্ছা দেখাবে কি না, সেটাও এক অন্যতম প্রশ্ন। কারণ, ইউক্রেন ও তার মিত্রদের আশা, পশ্চিমী অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার বছর জুড়ে চলা এ যুদ্ধকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে।
তৃতীয়ত, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে জাতীর উদ্দেশে বক্তৃতায় কিভের বিরুদ্ধে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। অকিঞ্চিৎকর সামরিক শক্তি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে ‘মহাশক্তিধর’ রাশিয়া কতটা সাফল্য পেয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাঁর নিজের দেশের নাগরিকদের মধ্যেও। এক কথা ঠিক, এই যুদ্ধে বরাবরই পাল্লাভারী রাশিয়ার। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তাও বেশি। কিন্তু রাশিয়া যুদ্ধে হেরে যায়, তা হলে অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হলেও হতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে ক্ষমতা পর্যন্ত হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে তাঁর। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যত দিন না আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তত দিন সমস্ত প্রশ্ন অমীমাংসিতই থাকছে।
আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ় এনকাউন্টার: সুকমায় মাওবাদী হামলায় নিহত ৩ জওয়ান