সুদানের সেনাবাহিনী এবং একটি আধাসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে নৃশংস সংঘর্ষ। ঘনবসতিপূর্ণ খার্তুমে ট্যাঙ্ক যুদ্ধ এবং ফাইটার জেট বিমান হামলা, ভয়ঙ্কর অবস্থায় ফেলেছে পুরো দেশকে। বাড়ছে মৃত্যু, গুরুতর অস্থিরতা এবং ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে ক্ষতিক্ষতির বহর।
দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যাপক সংঘর্ষ
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে সশস্ত্র সংঘাত চলছে। সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে এই সংঘাতে এরই মধ্যে কয়েকশো মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। এই সংঘাতে এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি।
সুদানের রাজধানীর উত্তরে তোলা একটি সাম্প্রতিক ভিডিয়োয় সুদানি সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)-এর মধ্যে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে। আরবিতে একটি ক্যাপশন-সহ ভিডিয়োটি শেয়ার করেছেন হাসানা আল-ঘানজি নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী।
রাজধানী খার্তুমের প্রধান বিমানবন্দরটি সেনাবাহিনী এবং আরএসএফ-এর মধ্যে লড়াইয়ের স্থান। খার্তুম থেকে সাড়ে ৮০০ কিলোমিটার দূরে লোহিত সাগরের বন্দর সুদান থেকে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
নাগরিকদের ফেরাতে তৎপর ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ
পরিস্থিতি অনুধাবন করে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সুদান থেকে নাগরিকদের উদ্ধার করার পরিকল্পনা ভারত, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের। সেনা এবং আধাসেনার সংঘর্ষের জেরে গত দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত সুদান। সেখানে আটকে থাকা নিজের দেশের নাগরিকদের উদ্ধারের বিষয়ে তৎপর বিভিন্ন রাষ্ট্র। সুদানে আটকে থাকা নিজের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ভারত। ভারতীয় বায়ুসেনার দুটি সি-১৩০জে বিমান জেড্ডায় (সৌদি আরব) মোতায়েন করা হয়েছে, যখন আইএনএস সুমেধাকে পোর্ট সুদানে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশমন্ত্রক বলেছে, সুদান থেকে ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সম্ভাব্য সবকিছু করছে।
বুধবার ভোরে সুদানে আটকে থাকা মোট ১৩৫ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করে বায়ুসেনার আইএএফ সি-১৩০জে বিমানে করে সৌদি আরবের জেড্ডায় আনা হয়েছে। মঙ্গলবারই সুদান থেকে দ্বিতীয় দফায় ১৪৮ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করে জেড্ডায় আনা হয়। তাঁদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন। অন্য় দিকে, নৌসেনার আইএনএস সুমেধাও ২৭৮ জন ভারতীয়কে সুদান থেকে উদ্ধার করে জেড্ডা বন্দরে পৌঁছেছে।
সুদানে আটকে থাকা ভারতীয়দের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত শনিবার সর্বোচ্চ স্তরের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সুদানে ভারতের রাষ্ট্রদূত রবীন্দ্রপ্রসাদ জয়সওয়াল, বায়ু সেনা প্রধান এয়ার মার্শাল বিবেক রাম চৌধরি, নৌ সেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল আর হরিকুমার এবং বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি, ভারতীয়দের দ্রুত সুদান থেকে সরিয়ে ফেলার উপরে জোর দেওয়া হয়।
এক দিকে বিদেশমন্ত্রকের কর্মকর্তারা সুদানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, অন্য দিকে কর্মকর্তাদের একটি পুরো দল সুদানের আশেপাশের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। মন্ত্রক বলছে, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিশয়টি নির্ভর করছে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, সৌদি আরব শনিবার একটি নৌ অভিযানে পোর্ট সুদান থেকে বিদেশি কূটনীতিক ও কর্মকর্তা-সহ ১৫০ জনকে সরিয়ে নিয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী রোববার খার্তুম থেকে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নিতে তিনটি চিনুক হেলিকপ্টার পাঠায়। রবিবার ফরাসি বিদেশমন্ত্রকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১০০ জনকে সুদান থেকে বিমানে করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক টুইটারে লেখেন, ব্রিটিশ বাহিনী সুদান থেকে যুক্তরাজ্য দূতাবাসের কর্মী ও তাঁদের পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: দফায় দফায় রণক্ষেত্র কালিয়াগঞ্জ, খোঁজ নিলেন রাজ্যপাল