কাকদ্বীপ ও নামখানার মৎস্যজীবীদের মধ্যে এবারের ইলিশ ধরার মরশুম হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৫ জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আনুমানিক মাত্র সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, ইলিশের পরিমাণে এই ভাটার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের মতে ইলিশ কম ওঠার পিছনে দূষণও একটা কারণ।
মৎস্যজীবীদের মতে, বঙ্গোপসাগরের এবারের খামখেয়ালি আবহাওয়া ইলিশ ধরায় বড় বাধা তৈরি করেছে। সমুদ্রে একাধিক ঝড় ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত তিন মাসে প্রায়শই মাছ ধরার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এমনকি সমুদ্রযাত্রা বন্ধ থাকার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি, ট্রলার দুর্ঘটনায় ন’জনের মৃত্যুর পর অনেক মৎস্যজীবী আতঙ্কে সমুদ্রে নামতেই পারেননি।
এবারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো, সমুদ্রের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, উপকূল থেকে ৪০-৫০ কিলোমিটার গভীরে সাধারণত যেখানে তারা ইলিশ ধরতে যেতেন, সেখান থেকে ইলিশের ঝাঁক সরে গিয়ে আরও গভীর সমুদ্রে চলে গেছে। কিন্তু সীমিত ক্ষমতার ট্রলারগুলির পক্ষে এত গভীরে গিয়ে মাছ ধরা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ইলিশ ধরার পরিমাণ আশানুরূপ হয়নি।
এছাড়া মৎস্যজীবীদের দাবি, ইলিশের মরশুম শুরুর আগেই প্রচুর পরিমাণে খোকা ইলিশ ধরা হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে মরশুমের বাকি সময়ে। এই খোকা ইলিশ ধরা ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে এবং পরবর্তীতে বড় ইলিশের অভাব দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরাও মৎস্যজীবীদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন বায়োলজিস্ট সুমিত মণ্ডল বলেন, “আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের গতিপ্রকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে এবং সমুদ্রে ক্রমবর্ধমান দূষণের প্রভাবও রয়েছে। এসব কারণেই এবারে ইলিশের ঝাঁক গভীর সমুদ্রে চলে গেছে।”
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “ইলিশের পরিমাণ আমাদের আয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এবারে এত কম ইলিশ পাওয়া গেছে যে আর্থিক লোকসান নিশ্চিত। ২০২০ সাল থেকে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে ভাটার পরিমাণ বাড়ছে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী বছর আরও ট্রলার বসে যাবে।”
আবহাওয়া পরিবর্তন ও দূষণের এই প্রভাব ইলিশ ধরার ওপর কীভাবে পড়ছে, তা এখনই পর্যালোচনা করা প্রয়োজন, নইলে বাংলার মৎস্যজীবীরা আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us