কলকাতা: সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়ো। শনিবার সকালে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে এমনই দাবি করতে শোনা গিয়েছিল বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে। তবে, ভিডিয়োতে যে কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, সেটি তাঁর নয় দাবি করে সিবিআই-এর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
সন্দেশখালি-কাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিও ঘিরে চলছে জোর চর্চা । সেই ভিডিও নিয়েই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিও নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। এ ভাবেই সন্দেশখালি নিয়ে ফের তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। কী আছে ওই ভিডিয়োয়?
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিডিয়োতে দাবি, সন্দেশখালির মহিলাদের উপর অত্যাচারের যে অভিযোগ প্রকাশ্যে এনে এত দিন আন্দোলন করা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং সাজানো। বিজেপির তরফে টাকা দিয়ে গোটা বিষয়টি সাজানো হয়েছে। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে বিজেপি মণ্ডল সভাপতিকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ক্যামেরার অন্য দিকে আরও কয়েক জনকে কথা বলতে শোনা যায়। ভিডিও-য় যে কথোপকথন শোনা যায়, তা হল, ‘এই আন্দোলনকে ধরে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। শুভেন্দুদা তাঁর লোকজনকে দিয়ে টাকা, মোবাইল পাঠিয়ে সাপোর্ট দিচ্ছেন…’।
ওই ভিডিয়োতে সন্দেশখালি ২ মণ্ডলের সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে বিস্ফোরক একাধিক মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে। ভিডিয়োয় গঙ্গাধর বাবুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, মহিলাদের ফুঁসলিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে। আসলে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আর এই কাজে টাকা ও মোবাইল ফোন দিয়ে সাহায্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করাতে না পারলে আন্দোলন করা যাবে না। ভোটেও দাঁড়ানো যাবে না।
ভিডিও-র কথোপকথনে আরও শোনা যায়, “আমাদের বাড়ির বউদের দিয়ে এটা করানো যেত! আমরাই পারতাম না। দাদা সেখানে বাইরের লোক হয়ে তাদের দিয়ে করিয়েছে। তৃণমূলের লোকদের দিয়েই করিয়েছে…।” শুধু তাই নয়, গঙ্গাধরের কথায় বার বার উঠে এসেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নামও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ” শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটা না করলে, তাবড় তাবড় লোকদের গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।”
এই ভিডিও প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের সামনে বলেন, সন্দেশখালি নিয়ে তাঁর বক্তব্যের যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তা ‘বিকৃত’। এই অভিযোগ জানিয়ে সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে ই-মেল পাঠিয়েছেন সন্দেশখালির বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল।
শুভেন্দুর দাবি, এই সব কিছু ‘কয়লা ভাইপোর তৈরি’। তাঁর নিশানায় যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তা এক প্রকার স্পষ্ট। পাশাপাশি, শুভেন্দু আঙুল তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও। তাঁর দাবি, ভোটে হারবেন বুঝেই এ সব করিয়েছেন মমতা।
তবে, এই ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে পুরোদমে নেমে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, “সন্দেশখালির হতবাক করা স্টিং অপারেশন দেখাল যে বিজেপি ভিতর থেকে কতটা পচা। বাংলার প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা এবং সংস্কৃতির প্রতি ওদের যে ঘৃণা আছে, সেটার জন্য বাংলা-বিরোধীরা যতরকমভাবে আমাদের রাজ্যকে বদনাম করা যায়, সেটার জন্য চক্রান্ত করেছিল।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”সন্দেশখালির স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি বললেও কম বলা হবে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাকে বদনাম করতে বাংলা-বিরোধী বিজেপি যেভাবে পুরোটা সাজিয়েছিল, সেটা প্রত্যেক নাগরিকের দেখা উচিত। এই ঘৃণ্য ঘটনাটি ইতিহাসে সবথেকে বড় আকারে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক হয়ে গেল। লজ্জাজনক।”
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ শেষ! বৃষ্টির পালা শুরু হতে চলেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গে