উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: বামুনগাছির ঘটনায় দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার জয়নগর থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন বামেদের।
গত ১৩ নভেম্বর ভোর ৫টা নাগাদ বাড়ির কাছে স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ও তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্করের(৪৭)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,পাঁচ জন দুষ্কৃতীর ছোড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর। পালানোর সময় একজনকে ধরে ফেলেন ক্ষিপ্ত জনতা। অভিযোগ, গণপিটুনির জেরে মৃত্যু হয় সাহাবুদ্দিন লস্কর নামে ওই অভিযুক্তের। এরপর অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের দলুয়াখাঁকি গ্রাম।
গ্রামে প্রায় ২০-২৫ টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় হামলা কারীরা। শুধু আগুন নয় ২০-২৫ টি বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। এরপরও গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে যায়। গ্রামের মহিলা ও শিশুরা আশ্রয় নেয় দক্ষিণ বারাসতের সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের খুনের ঘটনায় পর গ্রামের মধ্যে থাকা সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বেছে বেছে হামলা ও আগুন লাগায় হামলাকারীরা।
এরপর কেটে গিয়েছে কয়েকটা দিন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে গ্রাম। গ্রামের অসহায় মানুষদের সাহায্য জন্য এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গ্রামে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সিপিএম। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরে গ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
দলুয়াখাকিতে বাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে জয়নগর থানার পুলিশ। কিন্তু এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার গ্রামের মানুষদের বাড়ি জ্বালানোর ঘটনায় সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যাক্তিদের গ্রেফতারের দাবি নিয়ে সোমবার জয়নগর থানা ঘেরাও কর্মসূচির আয়োজন করেন বাম নেতৃত্ব।
সোমবার বিকালে সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা সুজন চক্রবর্তী ও কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কয়েকশো বাম কর্মী-সমর্থকরা জয়নগর থানা ঘেরাও করেন। বামেদের পক্ষ থেকে দাবি, দলুয়াখাকিতে বাড়ি জ্বালানো ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে ও সর্বস্বান্ত মানুষদের সমস্ত রকম ক্ষতি পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকে।
এ ছাড়া নিরপেক্ষ তদন্ত করে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের প্রকৃত খুনিকে গ্রেফতার করে কঠোর সাজা দিতে হবে। এই বিষয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা যে কোনো খুনের ঘটনার নিন্দা করি। জয়নগরে যে তৃণমূল নেতা খুন হয়েছে “সে মাফিয়া নেতা, পুলিশের ডাক মাস্টার”। আজ তৃণমূলের নেতা নেতৃত্ব নিরাপদ নয়। পুলিশের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। একটা খুনকে কেন্দ্র করে গোটা গ্রাম পুড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। পুলিশ এখনও কেন চুপ করে রয়েছে। আমরা এসেছি পুলিশ যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্ত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়’। এ দিনের এই কর্মসূচিতে অশান্তি এড়াতে প্রচুর পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সংসদের শীতকালীন অধিবেশন ৪ থেকে ২২ ডিসেম্বর, তার আগে ২ ডিসেম্বর সর্বদল বৈঠক ডাকল কেন্দ্র