একদিন প্রশাসন ও অন্যদিকে দল। জোড়া হাতিয়ার নিয়ে সন্দেশখালির ক্ষোভ প্রশমনে নেমেছেন মমতা ও অভিষেক। কিন্তু তাতে ক্ষোভ মিটবে? সন্দেশখালির মানুষ আবার কী তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে?
রবিবার সন্দেশখালি যান রাজ্যের তিন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু এবং বিরবাহা হাঁসদা। এর আগে সন্দেশখালি গিয়েছিলেন পার্থ ভৌমিক।
এলাকা মানুষের মূল ক্ষোভ জোর করে জমি দখল করে ভেড়ি ব্যবসা করার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ রয়েছে, শেখ শাহজাহান এবং তাঁর দুই শাগরেদ উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই উত্তম ও শিবুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন গ্রেফতার করা হোক শাহজাহানকে।
শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে ডিজি রাজীব কুমার শনিবার বলেন, ‘ইডিই তো শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল। তারা কেন তাকে গ্রেফতার করছে না? ডিজি আরও বলেন, ‘রাজ্য পুলিশ যখন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে তখন ইডি সেই তদন্ত বন্ধ করে দেয়।’
লিজের টাকা দেওয়া শুরু
দলীয় সূত্রে খবর, তিনমন্ত্রীর হাত দিয়ে টাকা ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক স্বীকার করেছিলেন, গত দু’বছর ইজারার টাকা, ভেড়ির টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যাঁদের টাকা ফেরত পাওয়ার কথা, তাঁদের টাকা ফেরত দেবে দল। সেই মতো স্থানীয় ভাবে একটি কমিটিও গঠন করেছে শাসকদল।
সেই দলে রয়েছেন সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গণেশ হালদার, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অষ্টমী সর্দার এবং তৃণমূলের এসসি-এসটি-ওবিসি সেলের নেতা মহেশ্বর সর্দার।
শিবির খুলে অভিযোগ শুনছে প্রশাসন
রীতিমতো শিবির করে শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শোনা শুরু করেছে প্রশাসন। সন্দেশখালির দু’টি মোট সাতটি শিবির খোলা হয়েছে। রবিবার অন্তত ৩২০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে জমি সংক্রান্ত অভিযোগ তো রয়েছে। তার সঙ্গে বার্ধক্য ভাতা ও বিধাবা ভাতা সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে।
ক্ষোভের মুখে জনসংযোগ প্রতিনিধিরা
এই শিবির করতে গিয়ে ক্ষোভের মুখেও পড়ছেন প্রতিনিধিরা। গ্রামবাসীদের আস্থা ফেরাতে রবিবার ব্লক প্রশাসনের গান-প্রচারকের দল পাঠানো হয়েছিল বাড়িতে বাড়িতে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাঁরা জানাচ্ছিলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, জাতিগত শংসাপত্র সংক্রান্ত কোনও পরিষেবা পেতে সমস্যা হলে, তার দ্রুত সুরাহা হয়ে যাবে।
সন্দেশখালি ২ নম্বের ব্লকের প্রতিনিধিরা ক্ষোভের মুখে পড়ছে। বাসিন্দা তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। সন্দেশখালির বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘এ সব গানবাজান শুনে কোনও লাভ হবে না। আমরা শান্তি চাই। শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না শাহাজাহান শেখকের ধরা হচ্ছে ততক্ষণ শান্তি নেই। ’
১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
সন্দেশখালিতে আস্তে আস্তে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে প্রশাসন। শনিবার ডিজি রাজীব কুমার জানিয়েছিলেন, এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনা করে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের ভাবনা-চিন্তা করা হয়েছে। রবিবার সন্দেশখালির পাঁচটি এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেয় প্রশাসন।
সন্দেশখালি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
রবিবার বীরভুমের সিউড়িতে সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্দেশখালিতে একটা ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রথমে ইডি-কে পাঠিয়েছে। তার পর তাদের বন্ধু বিজেপি ঢুকেছে। তিলকে তাল করা হয়েছে। শান্তির পরিবর্তে আগুন লাগাচ্ছে। আমি অফিসার পাঠাব, যার যা অভিযোগ আছে, বলবেন। কেউ যদি কিছু নিয়ে থাকে, সব ফেরত দেওয়া হবে।’
সন্দেশখালিতে তৃণমূলের সভা
৩ মার্চ সন্দেশখালিতে জনসভা করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সভায় উপস্থিত থাকবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ ভৌমিক, ব্রাত্য বসু, তাপস রায় ও নির্মল ঘোষ-রা। প্রায় ১ লক্ষ মানুষের জমায়েতের টার্গেট নিয়েছে শাসকদল।
প্রশাসন ও দলীয় কর্মসূচি – এই দুই হাতিয়ারে কি সন্দেশখালির দীর্ঘদিনের ক্ষোভ সামাল দেওয়া সম্ভব? সবার নজর সেই দিকেই?
পড়ুন
ঢোকার আগেই বাধা পুলিশের, সন্দেশখালি নিয়ে হাইকোর্টে শুভেন্দু অধিকারী