ভারত: ২৪০-৯ (কে এল রাহুল ৬৬, বিরাট কোহলি ৫৪, মিচেল স্টার্ক ৩-৫৫, প্যাট কামিন্স ২-৩৪)
অস্ট্রেলিয়া: ২৪১-৪ (৪৩ ওভার) (ট্র্যাভিস হেড ১৩৭, মার্নাস লাবুশানে ৫৮, জসপ্রীত বুমরাহ ২-৪৩)
অমদাবাদ: পারল না ভারত। ২০ বছর পরে বিশ্বকাপের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত আর অস্ট্রেলিয়া। আশা ছিল, ভারত এ বার যে ভাবে টানা জিতে এসেছে, তাতে তারা ২০০৩-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ তুলবে। কিন্তু না, ক্রিকেটের ‘ল’ অভ অ্যাভারেজ’ কি শেষ পর্যন্ত ফাইনালেই কার্যকর হল? এ বারের বিশ্বকাপে টানা ১০টা ম্যাচ জিতে এসেছে ভারত, রবিবারে ফাইনালেই প্রথম হারল তারা।
অমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রাথমিক ভাবে নিজেদের লক্ষ্যে ঠিক থাকে অস্ট্রেলিয়া। তারা ভারতকে আটকে রাখে ২৪০ রানে। এই লক্ষ্যমাত্রা খুব কঠিন ছিল না। সেই লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে শুরুতে বিপাকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারায়। কিন্তু আসল কাজটি করে ফেলেন ট্র্যাভিস হেড। লাবুশানের সঙ্গে জুটি বেঁধে শতরান করে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। অস্টেলিয়া জিতে যায় উইকেটে। স্বাভাবিক ভাবেই ট্র্যাভিস হেড ‘প্লেয়ার অভ দ্য ম্যাচ’ হন।
রান পেলেন শুধু রাহুল, কোহলি, রোহিত
ব্যাট করতে নেমে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা যথারীতি নিজের লক্ষ্য নিয়ে খেলা শুরু করেন। যে লক্ষ্য হল দলকে শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড় করানো। কিন্তু এ দিন তাঁর সঙ্গী শুভমন গিল খুব বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি। ৭ বলে ৪ রান করে তিনি স্টার্কের বলে অ্যাডাম জাম্পার হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। দলের রান তখন ৩০।
ভারতের এই উইকেট পতন নিয়মিত ব্যবধানেই চলতে থাকে। কিন্তু রোহিত আক্রমণাত্মক ভূমিকা চালিয়ে যেতে থাকেন। মাত্র ৩ রানের জন্য তিনি অর্ধশত রান থেকে বঞ্চিত হন। দলের রান তখন ৭৬। ৩১ বলে ৪৭ রান করে রোহিত গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ট্র্যাভিস হেডকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। দলের স্কোরে মাত্র ৫ রান যোগ হতেই বিদায় নেন শ্রেয়স আইয়ার। শ্রেয়সও ব্যর্থ। ৩ বলে ৪ রান করে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে জোশ ইংলিসকে ক্যাচ দেন তিনি।
এর পর উইকেট পতন কিছুটা ঠেকিয়ে রাখেন বিরাট কোহলি এবং কে এল রাহুল। কোহলি তাঁর ৫০ রান পূর্ণ করেন। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে বিরাট বিদায় নেন কামিন্সের শিকার হয়ে। দলের রান তখন ১৪৮। এর পর উল্লেখযোগ্য রান কে এল রাহুলের। তিনি করেন ১০৭ বলে ৬৬ রান। তিনি মিচেল স্টার্কের বলে ইংলিসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। রাহুল আউট হওয়ার আগেই অবশ্য বিদায় নেন রবীন্দ্র জাদেজা। হ্যাজলউডের বলে জাদেজারও ক্যাচ ধরেন ইংলিস।
দলের ২০৩ রানে কে এল রাহুল আউট হওয়ার পর বাকি ৪ উইকেটে যোগ হয় মাত্র ৪ রান। অস্ট্রেলিয়াকে ২৪১ রানের লক্ষ্যমাত্রা দেয় ভারত। অস্ট্রেলীয় বোলাররা ভারতের উইকেটগুলো ভাগ করে নেন। সবচেয়ে সফল বোলার মিচেল স্টার্ক। তিনি ৫৫ রানে ৩ উইকেট দখল করেন।
ম্যাচের মোড় ঘোরালেন হেড, সঙ্গী লাবুশানে
জয়ের জন্য ২৪১ রানের মাঝারি লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে অস্ট্রেলিয়া গোড়ার দিকে বিপাকে পড়ে। মাত্র ৪৭ রানের মধ্যে তারা ৩ উইকেট হারায়। দলের ১৬ রানের মাথায় প্রথম আঘাত হানেন মোহম্মদ শামি। বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ডেভিড ওয়ার্নার। এর পর মিচেল মার্শকে তুলে নেন জসপ্রীত বুমরাহ। কে এল রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে মার্শ আউট হন। দলের রান তখন ৪১। ৬ রান যোগ হতেই বিদায় নেন স্টিভ স্মিথ। বুমরাহের বলে তিনি এলবিডব্লিউ হন। ৪৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যেতে ভারতের সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধেন।
কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে দেন ট্র্যাভিস হেড। মার্নাস লাবুশানেকে সঙ্গী করে তিনি দলের রান একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ভারতের কোনো বোলারকেই রেয়াত করেনি হেড-লাবুশানে জুটি। দু’জনে মাথা ঠান্ডা করে দুর্দান্ত কৌশল করে এগিয়ে যেতে থাকেন। এক দিকে মারমুখী হেড, অন্য দিকে তাঁর স্থিতধী সঙ্গী লাবুশানে। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে ১০০ রান যোগ হয় ২৭তম ওভারের পঞ্চম বলে। রবীন্দ্র জাদেজার বলে ১ রান নিয়ে লাবুশানে তাঁদের জুটিতে শতরান সম্পূর্ণ করেন।
ইতিমধ্যে হেড ব্যক্তিগত ৮৯ রান থেকে নিজের ১০০ রান পূর্ণ করেন ইনিংসের ৩৩তম ওভারে। কুলদীপ যাদবের প্রথম তিন বলে ১০ রান নিয়ে তিনি পৌঁছে যান ৯৯-এ। তার পর কুলদীপের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে শতরান পূর্ণ করেন হেড। ওদিকে নিজের পঞ্চাশ রান পূর্ণ করেন লাবুশানে। ৪০তম ওভারে বুমরাহের বলে ৪ মেরে ৫০ পূর্ণ করেন লাবুশানে।
জয়ের দোরগোড়ায় এসে হাত খোলেন লাবুশানেও। পরের ওভার ছিল মোহম্মদ সিরাজের। ওঁর বলেও চার মারেন লাবুশানে। শেষ পর্যন্ত জয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২ রান দূরে থেকে বিদায় নেন হেড। মোহম্মদ সিরাজের বলে শুভমান গিলকে ক্যাচ দিয়ে তিনি যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন তখন দলের রান ২৩৯। ১২০ বলে ১৩৭ রান করেন হেড। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যাট করতে নেমে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২ রান তুলে নেন। ১১০ বলে ৫৮ রান করে নট আউট থাকেন মার্নাস লাবুশানে।