Home খেলাধুলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি, মাত্র ৫ রানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে...

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি, মাত্র ৫ রানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেল নিউজিল্যান্ড

0
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর জয়। স্বস্তি অস্ট্রেলিয়ার। ছবি আইসিসি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

অস্ট্রেলিয়া: ৩৮৮ (৪৯.২ ওভার) (ট্র্যাভিস হেড ১০৯, ডেভিড ওয়ার্নার ৮১, গ্লেন ফিলিপস ৩-৩৭, ট্রেন্ট বোল্ট ৩-৭৭)   

নিউজিল্যান্ড: ৩৮৩-৯ (রাচিন রবীন্দ্র ১১৬, জেমস নিশাম ৫৮, ড্যারিল মিচেল ৫৪, অ্যাডাম জাম্পা ৩-৭৪)

ধরমশালা: ৫০তম ওভারের শেষ বল। বল করছেন মিচেল স্টার্ক, ব্যাট হাতে লকি ফার্গুসন। জয়ের জন্য দরকার একটা ছক্কা। না, পারলেন না ফার্গুসন। কোনো রান হল না। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ৫ রানে হেরে গেল নিউজিল্যান্ড।

রুদ্ধশ্বাস লড়াই দুই দলের  

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন রুদ্ধশ্বাস লড়াই খুব কমই দেখা গিয়েছে। আবার একগুচ্ছ রেকর্ড হল এই ম্যাচে। এ বার এক ম্যাচে সর্বাধিক রানের রেকর্ড। মোট ৯৯.২ ওভারে ৭৭১ রান। কেউ কম যায়নি। প্রথম ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া করে ৩৮৮ রান। মূলত দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্র্যাভিস হেড-এর ঝোড়ো ব্যাটিং-এর সুবাদে অস্ট্রেলিয়া ৩৮৮-তে পৌঁছে যায়। এরই সঙ্গে একদিনের ম্যাচের ইতিহাসে আরও একটা রেকর্ড করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। তারাই একমাত্র দল যারা একদিনের ম্যাচের ইতিহাসে টানা তিনটি খেলায় সাড়ে তিনশোর বেশি রান করল।

কিন্তু সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি বোধহয় একেই বলে। নিউজিল্যান্ডের অতি বড়ো সমর্থকও বোধহয় কল্পনা করতে পারেনি তারা জয়ের জন্য এই ভাবে রান তাড়া করবে। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কিউয়িরাও একটা রেকর্ড গড়ে ফেলল। জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছোনোর জন্য এত বেশি রান কিউয়িরা কখনও করেনি। এর জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য রাচিন রবীন্দ্রর। তিনি সঙ্গে পেয়েছিলেন জেমস নিশাম আর ড্যারিল মিচেলকে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ৫০ ওভারে তারা করল ৯ উইকেটে ৩৮৩। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫ রানে হেরে গেল নিউজিল্যান্ড। ৫৯ বলে সেঞ্চুরি করে এবং শেষ পর্যন্ত ৬৭ বলে ১০৯ রান করে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন ট্র্যাভিস হেড।

যে ভাবে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া, তাতে মনে হয়েছিল ৫০ ওভারের একদিনের ম্যাচে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড তৈরি হবে। এমনকি সেই রান হয়তো ৫০০-ও ছুঁয়ে যেতে পারে। ৪.১ ওভারে যদি ৫০ রান হয়, ৮.৫ ওভারে যদি ১০০ রান ওঠে, ১৫০ যদি উঠে যায় ১৪.৫ ওভারে, তা হলে ৫০ ওভারে ৫০০ উঠবে না কেন? কিন্তু আশা পূর্ণ হল না। ২৪তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ছিল ১ উইকেটে ২০০ রান। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ করল ৩৮৮ রানে। অর্থাৎ বাকি ৯ উইকেট পড়ে গেল ১৮৮ রানে। এবং ৪ বল বাকি থাকতেই ইনিংস শেষ হয়ে গেল।

হেড-ওয়ার্নারের গড়া ভিতে ৩৮৮-তে পৌঁছোল অস্ট্রেলিয়া  

শনিবার ধরমশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে নিউজিল্যান্ড টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠায়। আর সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া। শুরুতেই ঝড় তুলে দেন দুই ওপেনার – ডেভিড ওয়ার্নার আর ট্র্যাভিস হেড। চার-ছয়ের বন্যা ছোটে। প্রথম উইকেটের জুটিতে ৫০ রান ওঠে মাত্র ৪.১ ওভারে, ১০০ রান পূর্ণ হয় ৮.৫ ওভারে। তার আগেই অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে ট্রেন্ট বোল্টকে ১ রান নিয়ে নিজের ৫০ পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। মাত্র ২৮ বলে অর্ধশত রান করেন তিনি। পিছিয়ে ছিলেন না হেডও। পরের ওভারের শেষ বলে মিচেল স্যান্টনারকে ৪ মেরে নিজের ৫০ পূর্ণ করেন। হেড ৫০ করতে নেন ২৫টি বল।

ঝড় চলতে থাকে। দলের ১৫০ রান আসে ১৪.৫ ওভারে। ইতিমধ্যে দুই ব্যাটসম্যান সত্তরের ঘরে ছুটছেন। ১৯ ওভারে উঠে গেল ১৭৫ রান। আর তখনই আঘাত হানল নিউজিল্যান্ড। এ বার আর সেঞ্চুরি পেলেন না ওয়ার্নার। নিজস্ব ৮১ রানে ইনিংস শেষ হয়ে গেল তাঁর। ২০তম ওভার করতে এলেন গ্লেন ফিলিপস। প্রথম বল। সামনের পা-টা এগিয়ে দিয়ে ফিলিপসের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ওয়ার্নার। বলের পিচটা ঠিকমতো পেলেন না। বল ফিলিপসের মাথার উপর দিয়ে যাওয়ার বদলে তাঁর হাতের মুঠোয় চলে গেল। ৫টা চার আর ৬টা ছয় মেরে ৬৪ বলে ৮১ করে প্যাভিলিয়নে ফেরত গেলেন ওয়ার্নার।

এর পরই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়তে শুরু করল অস্ট্রেলিয়ার। ৫ উইকেট পড়ে গেল ২৭৪ রানের মধ্যে। ইতিমধ্যে অবশ্য সেই ফিলিপসের বলে বোল্ড হয়ে দলের ২০০ রানে ফিরে গিয়েছেন ট্র্যাভিস হেড। ততক্ষণে তিনি অবশ্য তাঁর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। ৬৭ বলে ১০৯ রান, যার মধ্যে ছিল ১০টা চার আর ৭টা ছয়।

ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে হাল ধরলেন আগের ম্যাচে ইতিহাস গড়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং জোশ ইংলিস। তাঁরা ৫১ রান জুড়লেন ৬.২ ওভারে। দলের ৩২৫ রানে আউট হলেন ম্যাক্সওয়েল। ২৪ বলে ৪১ রান করে জেমস নিশামের বলে ট্রেন্ট বোল্টকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে গেলেন ম্যাক্সওয়েল। এ বার প্যাট কামিন্সের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইংলিস সপ্তম উইকেটের জুটিতে করলেন ৬২ রান। ইংলিস দলের ৩৮৭ রানে বোল্টের বলে ফিলিপসকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিতেই ধসে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। ১ রান যোগ হওয়ার পরেই দলের ৩৮৮ রানে আউট হয়ে গেলেন কামিন্স। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে ওই ৩৮৮ রানেই চলে গেল দলের শেষ দুই উইকেট। অর্থাৎ ৩৮৮ রানে অস্ট্রেলিয়া হারাল ৩ উইকেট। শুরুতে যে ভাবে গর্জে ছিল অস্ট্রেলিয়া শেষকালে সে ভাবে বর্ষাল না, যদিও লড়াই চালানোর জন্য ৩৮৮ যথেষ্ট ভালো রান।

শেষ বলে জয় এল না কিউয়িদের

জয়ের জন্য ৩৮৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ওভারপিছু রান তোলার হারে নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার থেকে একটু পিছিয়ে ছিল। ডেভন কনওয়ে এবং উইল ইয়ং-এর ব্যাটিং-এর সুবাদে কিউয়িরা ৫০ রানে পৌঁছোল ৫.১ ওভারে। দলের ১০০ রান এল ১৩.৪ ওভারে। কিন্তু ততক্ষণে দুই ওপেনার আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন। দু’জনেই জোশ হ্যাজলউডের শিকার হয়েছেন, ক্যাচ দিয়েছেন মিচেল স্টার্ককে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এখানেই কিউয়িদের খেলার ফারাক চোখে পড়ছিল। নিউজিল্যান্ডের জয় নিয়ে কেউই খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না।

তৃতীয় উইকেটের জুটিতে রাচিন রবীন্দ্র এবং ড্যারিল মিচেল খেলার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করলেন। তাঁরা যোগ করলেন ১৪.২ ওভারে ৯৬ রান। দলের ১৬৮ রানে দলের তৃতীয় উইকেট পড়ল। ৫১ বলে ৫৪ করে ড্যারিল মিচেল অ্যাডাম জাম্পার বলে স্টার্ককে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেলেন। নিউজিল্যান্ড যেন ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছিল। প্রথম উইকেটের জুটিতে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ১৭৫ রান ১৯.১ ওভারে। আর কিউয়িরা ১৬৮ রান করে ২৪ ওভারে এবং ততক্ষণে তাদের ৩টে উইকেট পড়ে গিয়েছে।

কিন্তু হাল ছাড়েননি রাচিন রবীন্দ্র। তিনি একে একে টম ল্যাথাম, গ্লেন ফিলিপস এবং জেমস নিশামকে সঙ্গে নিয়ে দলের রান পৌঁছে দিলেন ২৯৩ রানে। ততক্ষণে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন রবীন্দ্র। শেষ পর্যন্ত ৮৯ বলে ১১৬ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে মার্নাস লাবুশানের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন রবীন্দ্র। তখনও জয়ের জন্য ৯৬ রান বাকি। হাতে রয়েছে ৪ উইকেট এবং ৯.৪ ওভার।

এর পরেও ভাবা যায়নি এতটা লড়াই দিতে পারবে কিউয়িরা। জয়ের এত কাছাকাছি পৌঁছে যাবে তারা। টেলএন্ডারদের নিয়ে জেমস নিশাম দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলেন। কিন্তু দলের দুর্ভাগ্য এবং তাঁরও দুর্ভাগ্য। ৩৯ বলে ৫৮ রান করে ৫০তম ওভারের পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে গেলেন নিশাম। শেষ বলে ছক্কা মেরে দলকে জেতানোর দায়িত্ব পড়ল ১১ নম্বর ব্যাটার লকি ফার্গুসনের কাঁধে। যদি পারতেন, ইতিহাস রচিত হত!

দুটি দলই রইল প্রথম চারেই          

এ দিনের ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়া পর পর চারটে ম্যাচ জিতল। এ বারের বিশ্বকাপ খুব খারাপ শুরু করেছিল তারা। প্রথম দুটি ম্যাচেই হার। কিন্তু তার পর তারা যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যে দুর্ধর্ষ ব্যাট করছে, তাতে তাদের সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট ভাবাই যেতেই পারে। ৬ ম্যাচের ৪টি জিতে তাদের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। তারা রইল চতুর্থ স্থানেই।

আর এ দিনের হারের পর নিউজিল্যান্ড সমসংখ্যক ম্যাচে সমান পয়েন্ট সংগ্রহ করে রইল তৃতীয় স্থানেই। অস্ট্রেলিয়ার থেকে এক ধাপ ওপরে থাকার কারণ নেট রানরেট।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: কোন চার দেশ সেমিফাইনালে যেতে পারে?

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version