পাকিস্তান: ১৯১ (৪২.৫ ওভার) (বাবর আজম ৫০, মোহম্মদ রিজওয়ান ৪৯, জসপ্রীত বুমরাহ ২-১৯, হার্দিক পাণ্ড্য ২-৩৪)
ভারত: ১৯২-৩ (৩০.৩ ওভার) (রোহিত শর্মা ৮৬, শ্রেয়স আইয়ার ৫৩ নট আউট, শাহিন শাহ আফ্রিদি ২-৩৬)
অমদাবাদ: আটে আট। একদিনের ম্যাচের বিশ্বকাপে ভারতকে কিছুতেই কবজা করতে পারছে না পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এই নিয়ে আট বার তারা মুখোমুখি হল এবং আট বারই জিতল ভারত।
শনিবার অমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে যা ঘটল তাকে অবিশ্বাস্য বললে কম বলা হয়। টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠাল ভারত। পাকিস্তানের স্কোর ২ উইকেটে ১৫৫। ক্রিকেটবোদ্ধারা, দুই দেশের সমর্থকরা যখন ভাবতে শুরু করেছেন, এ বার ভারতের বিরুদ্ধে একটা জব্বর লড়াই দেবে পাকিস্তান, ভারতকে একটা কঠিন লড়াইয়ের সামনে ফেলে দেবে, হয়তো এ বারই বিশ্বকাপে ‘হেরো’র বদনাম ঘোচাবে, তখনই বিধাতা অলক্ষ্যে হাসলেন।
১৫৫-২ থেকে পাকিস্তান অল আউট হয়ে গেল ১৯১ রানে। নির্ধারিত ওভারের ৭.১ ওভার বাকি থাকতেই। আট আটটা উইকেট পড়ে গেল মাত্র ৩৬ রানে। অভাবনীয় ঘটনা। তখনই বোঝা গেল ম্যাচের ফল কী হতে চলেছে। ভারতকে হারানো পাকিস্তানের পক্ষে দুর অস্ত হয়ে গেল। যে ম্যাচ রান তাড়ার ক্ষেত্রে একটা উত্তেজক ম্যাচ হতে পারত, সেটা একটা ম্যাড়মেড়ে ম্যাচে পরিণত হল। জয়ের জন্য ১৯২ রান তাড়া করতে গিয়ে ভারত ভিরমি খাবে, এটা ভারতের অতি বড়ো শত্রুও ভাববে না।
ভারতের প্রায় প্রতিটি বোলার তাদের কাজ করে গেল। জসপ্রীত, সিরাজ, হার্দিক, কুলদীপ আর জাদেজা, প্রত্যেকে পাকিস্তানের ১০টা উইকেট সমান ভাগে ভাগ করে নিলেন। জবাবে ভারত ৩০.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলে নিল প্রয়োজনীয় ১৯২ রান। এ দিনও দুর্দান্ত খেললেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আর সঙ্গী ছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। ফলে পাকিস্তান হেরে গেল ৭ উইকেটে। এ ভাবেই এ বারের বিশ্বকাপে পর পর ৩টি ম্যাচ জিতল ভারত।
ব্যতিক্রমী বাবর, রিজওয়ান
পাকিস্তানের প্রথম চার জন ব্যাটার দুই অঙ্কের রানে পৌঁছেছিলেন। ফলে ২৯.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৫ তুলতে প্রথম দিককার ব্যাটারদের খুব একটা অসুবিধা হয়নি। প্রথম উইকেট পড়ে দলের ৪১ রানে। ২০ রান করে মোহম্মদ সিরাজের বলে এলবিডবলিউ হন আবদুল্লা শফিক। অপর ওপেনার ইমাম উল হকের সঙ্গী হন অধিনায়ক বাবর আজম। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ৩২ রান যোগ হওয়ার পর ৩৮ বলে ৩৬ রান করে হার্দিক পাণ্ড্যর বলে কে এল রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ইমাম উল হক।
খেলতে থাকেন বাবর আজম এবং মোহম্মদ রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে তাঁরা যোগ করেন ৮২ রান। ১৫৫ রানে মোহম্মদ সিরাজের বলে বাবর বোল্ড হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে পাকিস্তান। বাবর করেন ৫৮ বলে ৫০ রান। পরবর্তী ব্যাটারদের রান যথাক্রমে ৬, ৪, ২, ৪, ১২ এবং ২। মোহম্মদ রিজওয়ান করলেন ৬৯ বলে ৪৯ রান। ১৯১ রানে অল আউট হয়ে গেলেন বাবর আজমরা।
‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ বুমরাহ
রান তাড়া করতে নেমে দলের ২৩ রানে ভারত হারায় শুভমন গিলকে। ২৩ রানের মধ্যে ১৬ রানই গিলের। গিল আউট হলেন শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে শাদাব খানকে ক্যাচ দিয়ে। আগের দিন সেঞ্চুরি করা অধিনায়ক রোহিত শর্মা তখনও হাত খোলার অপেক্ষায়। রোহিতের সঙ্গী হলেন বিরাট কোহলি। তাঁরা রান টেনে নিয়ে গেলেন ৭৯-তে। হাসান আলির বলে মোহম্মদ নাওয়াজকে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন কোহলি (১৮ বলে ১৬ রান)।
৭৯ রানের মধ্যে ২টি উইকেট পড়ে গেলেও রান ওঠার গতি কখনও কমায়নি ভারত। এর পরই রোহিতের সঙ্গী হলেন শ্রেয়স আইয়ার। তাঁরা রান টেনে নিয়ে গেলেন ১৫৬-য়। মাত্র ১৪ রানের জন্য শতরান হারালেন রোহিত। রোহিতকে তুলে নিলেন সেই আফ্রিদি। এর পর উইকেটকিপার কে এল রাহুলকে সঙ্গী করে বাকি কাজটা সেরে ফেললেন শ্রেয়স আইয়ার। ৩০.৩ ওভারে ভারত পৌঁছে গেল লক্ষ্যমাত্রায়। শ্রেয়স ৬২ বলে ৫৩ রান করে এবং রাহুল ২৯ বলে ১৯ রান করে নট আউট থাকলেন। এ দিন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন জসপ্রীত বুমরাহ। তাঁর বোলিং হিসাব ৭ ওভার, ১ মেডেন, ১৯ রান, ২ উইকেট।
টেবিলের শীর্ষে ভারত
পাকিস্তানকে হারানোর পর লিগ টেবিলের শীর্ষে চলে গেল ভারত। ৩টি ম্যাচ খেলে ৩টিতেই জিতেছে তারা। নিউজিল্যান্ডও ৩টি ম্যাচ খেলে ৩টিতেই জিতেছে। দুই দলেরই সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট করে। কিন্তু নেট রান রেটের হিসাবে ভারত ছাপিয়ে গেল নিউজিল্যান্ডকে। আর এ দিন ভারতের কাছে হারের পরেও পাকিস্তান প্রথম চারের মধ্যেই থাকল। ৩টি ম্যাচ খেলে তারা ২টিতে জিতেছে। তাদের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। প্রথম চারের মধ্যে আর যে দলটি রয়েছে সেটি হল ইংল্যান্ড। ২টি ম্যাচ খেলে ২টিতেই জিতেছে তারা। তাদের সংগ্রহও ৪ পয়েন্ট।