ভারত: ৪ (অভিষেক ২, অমিত রোহিদাস, মনদীপ সিং) জাপান: ২ (জেনকি মিতানি, রিওসাই কাতো)
হ্যাংঝাউ: এশিয়ান গেমসে পুরুষদের হকিতে বৃহস্পতিবারই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছিল ভারত। গত বারের এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন জাপানের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে সসম্মানে উতরে গেল ভারত। যদিও শেষ মুহূর্তে পর পর ২টো গোল খাওয়া রক্ষণ নিয়ে তাদের চিন্তায় রাখল।
চিনের হ্যাংঝাউয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে পুরুষদের হকিতে প্রথম দুটি ম্যাচে প্রতিপক্ষদের উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানকে ১৬-০ গোলে পর্যুদস্ত করে ভারত। পরের খেলায় সিঙ্গাপুরকে ১৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে। এই দুটি ম্যাচ ছিল কার্যত একতরফা। ভারতের শক্তির প্রকৃত পরীক্ষা ওই দুটি ম্যাচে হয়নি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে গত বারের এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে এ দিনের ম্যাচ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর পর তিনটি ম্যাচ জিতে ভারত এ বারের এশিয়াডে সেমি-ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল।
গত বারে এশিয়ান গেমস হকিতে ভারতের কপালে জুটেছিল ব্রোঞ্জ পদক। এশিয়ান গেমসে হকি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১৯৫৮ সালে। ১৭টি এশিয়ান গেমসের মধ্যে ভারত মাত্র ৩ বার সোনা পেয়েছে – ১৯৬৬, ১৯৯৮ এবং ২০১৪ সালে। বিশ্ব হকিতে ৩ নম্বর স্থানে থাকা ভারত চতুর্থ বার সোনা পাবে কি না এবং প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সরাসরি যোগ্যতা অর্জন পারবে কি না, সেটা বোঝার জন্য বৃহস্পতিবার জাপানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল ভারত।
এ দিনের ম্যাচে প্রত্যেক কোয়ার্টারে গোল দিয়েছে ভারত। ম্যাচের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, ভারত তুলনামূলক ভাবে বেশি ভালো দল। বল নিয়ন্ত্রণ, বলের ওপর দখলদারি এবং স্কিল তথা দক্ষতা – সবক’টি ক্ষেত্রেই এগিয়ে ছিল ভারত। যদিও জাপান ভারতের আক্রমণ ভালো ভাবেই ঠেকিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাঝেমাঝে প্রতি- আক্রমণে উঠে এসে গোল করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং দুটো গোলও করেছে।
ভারতের চার গোল কী ভাবে
ম্যাচের শুরুর দিকে দুটি দলই পেনাল্টি কর্নার পায়, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। এর পর জাপানের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে ভারত। ১৩ মিনিটে সার্কেলের বাইরে থেকে অভিষেকের কাছে পাস আসে। অভিষেক স্টিকের উলটো ব্যবহার করে বল ঠেলে দেন জাপানের গোলে। প্রথম কোয়ার্টারের ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে।
১৮ মিনিটে সুমিত ভারতের সার্কেল থেকে একক দক্ষতায় বল নিয়ে চলে যান জাপানের ‘ডি’-এর কাছে। তাঁর শট দুর্দান্ত দক্ষতায় ধরে ফেলেন জাপানের গোলকিপার তাকাশি ইয়োশিকাওয়া। ৬ মিনিট পরে ভারতের দ্বিতীয় গোল আসে। সার্কেলের বাইরে থেকে নীলকান্তের ফ্লিক মনদীপ সিংয়ের কাছে আসে। মনদীপ তা থেকে গোল করতে কোনো ভুলচুক করেননি। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষে ভারত ২-০ গোলে এগিয়ে থাকে।
বিরতির পর আবার খেলা শুরু হয় এবং চার মিনিটের মধ্যেই ভারত তৃতীয় গোল পায়। ভারতের অমিত রোহিদাস পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করেন। এই ম্যাচে বেশ কয়েকটা পেনাল্টি কর্নার নষ্ট হওয়ার পরে অমিতই প্রথম খেলোয়াড় যিনি পেনাল্টি কর্নার কাজে লাগাতে পারলেন।
ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ভারত তাদের চতুর্থ তথা সর্বশেষ গোলটি করে। অভিষেক স্টিকের জাদু দেখাতে দেখাতে বল নিয়ে মাঝমাঠ দিয়ে ছুটে যান। সার্কেলে ঢোকার ঠিক মুখে তিনি মনদীপকে বল দিয়ে আরও দৌড়ে এগিয়ে যান। মনদীপ বল আবার দিয়ে দেন অভিষেককে। জাপানের গোলকিপার ঘাবড়ে যান। এর সুযোগে অভিষেক গোল করেন।
শেষ মুহূর্তে জাপানের ২ গোল
খেলার তখন ৫ মিনিট বাকি। সবাই ধরে নিয়েছেন, ভারত সহজেই জিতে যাবে। তাদের খেলাতে একটু ঢিলেমিও চলে আসে। সেই সুযোগে একদম শেষ মুহূর্তে ২টি গোল করে বসে জাপান। জাপানের দ্বিতীয় গোল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলা শেষের বাঁশি বেজে যায়।
আরও পড়ুন
এশিয়াড ফুটবল: বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনাকে হারানো সৌদি আরবের কাছে হেরে বিদায় নিল সুনীল ছেত্রীর ভারত