সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ১১৩ (প্যাট কামিংস ২৪, আইডেন মার্করাম ২০, আন্দ্রে রাসেল ৩-১৯, মিশেল স্টার্ক ২-১৪)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১১৪-২ (১০.৩ ওভার) (বেঙ্কটেশ আইয়ার ৫২, রহমানুল্লাহ গুরবাজ ৩৯, প্যাট কামিংস ১-১৮)
চেন্নাই: প্রতিপক্ষকে নিয়ে এমন ছেলেখেলা আইপিএল-এর ১৭ বছরের ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে (এসআরএইচ) মাত্র ১১৩ রানে বেঁধে রেখে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) জয় তুলে নিল প্রায় অর্ধেক ওভারে (১০.৩ ওভার) মাত্র ২ উইকেট খরচ করে। ৮ উইকেটে জিতল তারা।
এই নিয়ে তিনবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল কেকেআর। এবং এবার চ্যাম্পিয়নের ট্রফি এল দশ বছর পর। এর আগে কলকাতা চ্যাপিয়ন হয়েছিল ২০১২ এবং ২০১৪ সালে। আর ২০২১-এ হয়েছিল রানার্স আপ। তিনবারের মধ্যে দু’বারই চ্যাম্পিয়নের ট্রফি এল চেন্নাইয়ের মাঠ থেকে।
হায়দরাবাদের আত্মসমর্পণ
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট নেয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। কিন্তু হায়দরাবাদের ব্যাটাররা কেকেআর-এর বোলারদের মোকাবিলাই করতে পারলেন না। অতি সহজেই তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন আন্দ্রে রাসেল, মিশেল স্টার্ক, হরষিত রানার বোলিংয়ের কাছে।
হায়দরাবাদের মোকাবিলা কত দুর্বল ছিল কতগুলি পরিসংখ্যানেই তার প্রমাণ মিলবে। প্রথমত, সর্বোচ্চ রান এল প্যাট কামিংস-এর ব্যাট থেকে এবং সেটা হল ২৪। দ্বিতীয়ত, সাত জন ব্যাটার দু’ অঙ্কের রানে ঢুকতেই পারলেন না। কোনো উইকেটের জুটিতে সবচেয়ে বেশি রান যেটা এল তা হল মাত্র ২৬। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১১৩ রান করে গুটিয়ে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
ওস্তাদের মার যে শেষ রাত্রে তা আর-এক বার প্রমাণ করলেন ২৫ কোটি টাকা দিয়ে কেনা মিশেল স্টার্ক। ২১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে হায়দরাবাদের। তার মধ্যে দুটিই তুলে নিলেন স্টার্ক। তাঁর বলে বোল্ড হলেন ওপেনার অভিষেক শর্মা (৫ বলে ২ রান) এবং রাহুল ত্রিপাঠী (১৩ বলে ৯ রান)। ৪.২ ওভারে ৩ উইকেটে ২১ রান করে হায়দরাবাদ তখন ধুঁকছে। জুটি বাঁধলেন আইডেন মার্করাম এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি।
মার্করাম-নীতীশের জুটিতে উঠল সবচেয়ে বেশি রান, ২৬। এই জুটি ভাঙলেন হরষিত রানা। রানার বলে রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন নীতীশ। দলকে দিয়ে গেলেন ১০ বলে ১৩ রান। ৪৭ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ার পর আবার দ্রুত উইকেট পড়তে থাকে। বাকি ১৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান যোগ করে হায়দরাবাদ। সবচেয়ে বেশি রান করেন করেন প্যাট কামিংস, ১৯ বলে ২৪ রান। এ ছাড়া মার্করাম করেন ২৩ বলে ২০ রান এবং হাইনরিখ ক্লাসেন ১৭ বলে ১৬ রান।
হায়দরাবাদের উইকেটগুলো ভাগ করে নেন কেকেআর-এর সব বোলার। কেউ খালি হাতে ফেরেননি। সবচেয়ে বেশি উইকেট পেলেন আন্দ্রে রাসেল (১৯ রানে ৩ উইকেট)। তার পরেই মিশেল স্টার্ক (১৪ রানে ২ উইকেট), হরষিত রানা (২৪ রানে ২ উইকেট), বরুণ চক্রবর্তী (৯ রানে ১ উইকেট), সুনীল নারিন (১৬ রানে ১ উইকেট) এবং বৈভব অরোরা (২৪ রানে ১ উইকেট)।
And at that moment, we knew we were the CHAMPIONS! 🏆pic.twitter.com/0WZbfzbSUc
— KolkataKnightRiders (@KKRiders) May 26, 2024
কেকেআর সহজেই পৌঁছে গেল লক্ষ্যে
জয়ের জন্য ১১৪ রানে পৌঁছোতে কেকেআর-এর লাগল মাত্র ১০.৩ ওভার। হায়দরাবাদের বোলারদের নাচিয়ে ছাড়লেন বেঙ্কটেশ আইয়ার এবং রহমানুল্লাহ গুরবাজ। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে তাঁরা যোগ করেন ৯১ রান। এ দিন গুরবাজের সঙ্গে যথারীতি ওপেন করেন সুনীল নারিন। কিন্তু ২ বলে ৬ রান করে কামিংসের বলে শাহবাজ আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে সুনীল যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন তখন কেকেআর-এর স্কোরবোর্ডে ১১ রান।
কেকেআর-এর সমর্থকরা তখন হয়তো একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তা হলে কলকাতাও কি হায়দরাবাদের পথ ধরবে? সমর্থকদের চিন্তা দূর করে ম্যাচে গেড়ে বসলেন বেঙ্কটেশ আর গুরবাজ। হায়দরাবাদের বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন তাঁরা। তবে দু’জনের মধ্যে গুরবাজ একটু সংযত থাকলেও, বেঙ্কটেশ তো কাউকে রেয়াত করেননি। এক সময়ে বেঙ্কটেশের রান ছিল ১৩ বলে ৪০ রান, স্ট্রাইক রেট ৩০০-এরও বেশি।
শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ৯১ রান যোগ করে বিদায় নিলেন গুরবাজ। এই ৯১ রান উঠল মাত্র ৭.৩ ওভারে। শাহবাজ আহমেদের বলে গুরবাজ এল বি ডব্লিউ আউট হন। তাঁর সংগ্রহ ৩২ বলে ৩৯ রান। বেঙ্কটেশের সঙ্গী আর-এক আইয়ার, দলের অধিনায়ক শ্রেয়স। বাকি ১০ বলে কাজ সমাধা করলেন দুই আইয়ার। ইতিমধ্যে বেঙ্কটেশ তাঁর অর্ধশত রান পূর্ণ করেছেন। ২৬ বলে ৫২ রান করে তিনি নট আউট থাকেন। তাঁর রানে ছিল ৩টে ছয়, ৪টে চার।