মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় কার্যত কেঁপে উঠেছে ভারতীয় বাজার। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই শুক্রবার থেকেই কার্যকর হতে চলেছে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ২৫% আমদানি শুল্ক। ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত এমন অনেক নিয়ম-কানুন চালু রেখেছে, যা পণ্যের দামের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, কিন্তু আমেরিকার কোম্পানিগুলোর জন্য ভারতে ব্যবসা করা কঠিন করে তোলে। এ ছাড়াও, ভারত আমেরিকায় প্রচুর পণ্য রফতানি করছে, কিন্তু আমেরিকা তুলনায় অনেক কম পণ্য ভারতে পাঠাতে পারছে। ফলে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যে ভারসাম্য নেই, আর তাতেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প।
এই ঘোষণার পরই গিফট নিফটি প্রায় ১৭০ পয়েন্ট হারায়। পাশাপাশি, রেকর্ড পতন হয়েছে ভারতীয় টাকারও—মে মাসের পর এই প্রথম এত বড় পতন হল একদিনে। বুধবার টাকা পৌঁছেছে পাঁচ মাসের সর্বনিম্ন স্তরে।
বাজারে কী প্রভাব পড়বে?
কোটাক মহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির এমডি নিলেশ শাহ ইকোনমিক টাইমসকে জানাচ্ছেন, এই সিদ্ধান্ত বাজারের পক্ষে একদমই সুখবর নয়। “যদিও মার্কিন নীতির ভবিষ্যৎ দুর্বোধ্য, তবুও বাজারে আশা ছিল একটা সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি হবে,” বলেন তিনি।
তবে শাহ আশাবাদী, দু’পক্ষের মধ্যে সহনশীলতা বজায় থাকলে একটা “TACO” (Trade Agreement on Competitive Offerings) চুক্তি সামনে আসতে পারে। পাশাপাশি, তিনি ভারতের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, “আমাদের প্রকৃত প্রতিরোধ আসছে জিডিপি এবং উৎপাদনশীলতার সীমা থেকে। ভারতকে এই সুযোগে চিনের মতো নিজেকে আরও দক্ষ ও প্রস্তুত করে তুলতে হবে।”
যেসব পণ্যে প্রভাব পড়তে পারে
বিশেষজ্ঞ গরিমা কাপুর জানাচ্ছেন, এই শুল্কে ভারত পিছিয়ে পড়বে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সের মতো প্রতিযোগী দেশের তুলনায়, যাদের পণ্যে কম শুল্ক লাগে আমেরিকায়। বিশেষত ফার্মাসিউটিক্যালস, যা ভারতের মোট রপ্তানির ৩০% মার্কিন বাজারেই যায়—এই খাতে শুল্ক আরোপ হলে বিশাল ধাক্কা লাগতে পারে।
তবে এখনও স্পষ্ট নয় কোন পণ্যগুলির উপর নির্দিষ্ট করে এই শুল্ক বসছে—স্টিল, গাড়ির যন্ত্রাংশ বা ওষুধ—সবই অনিশ্চয়তার মধ্যে।
GDP-তে ধাক্কার সম্ভাবনা
আইসিআরএ-র চিফ ইকনমিস্ট অধিতি নায়ার বলছেন, “আমেরিকা যে হারে শুল্ক এবং জরিমানার হুমকি দিচ্ছে, তাতে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে স্পষ্ট প্রভাব পড়তে চলেছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করছে জরিমানার মাত্রার উপর।” অন্যদিকে কাপুর বলেন, “যদি সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে কোনও চুক্তি না হয়, তাহলে পুরো বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অন্তত ২০ বেসিস পয়েন্ট কমে যেতে পারে।”
তবে তড়িঘড়ি কোনও খারাপ চুক্তির চেয়ে একটু দেরিতে হলেও ভাল চুক্তি হওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন অনেকেই।
সব মিলিয়ে বাজারের সামনে এখন অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ এবং আলোচনার অপেক্ষা—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও যে খবরগুলো পড়তে পারেন
- কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন পুরো ভেঙে গড়ার সিদ্ধান্ত! এক বছর বন্ধ থাকতে পারে দক্ষিণ প্রান্তের টার্মিনাল স্টেশন
- জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ বিপর্যয়: শুকিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর জলচক্র, তৈরি হচ্ছে ‘মেগা-ড্রাইং জোন’