খবর অনলাইন ডেস্ক: উত্তর কলকাতার অন্যতম বনেদি বাড়ি চোরবাগানের চট্টোপাধ্যায় পরিবার। তাদের পুজো এ বার ১৬৪ বছরে পড়ল।
১২০ নং মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে রয়েছে রামচন্দ্র ভবন। এই ভবনের নির্মাতা রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর বাড়ির ঠাকুরদালানে ১৮৬০ সালে শুরু করেন দেবী দুর্গার আরাধনা। রাঢ়ী শ্রেণির ব্রাহ্মণ রামচন্দ্র তাঁর স্ত্রী দুর্গাদাসীর পরামর্শেই শুরু করেছিলেন দেবীপূজা।
চোরবাগানের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে কাঠামোপুজো হয় জন্মাষ্টমী তিথিতে। ওই দিন একটি লাঠিকে পুজো করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, এই লাঠির বয়স আর পারিবারিক দুর্গাপুজোর বয়স একই। পুজোর পর সেই লাঠিটি দিয়ে আসা হয় কুমোরটুলিতে। সেখানেই নিমাই পালের স্টুডিওতে নির্মিত হয় ওই পরিবারের দুর্গাপ্রতিমা। অতীতে নিমাই পালের পূর্বসূরিরা বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি করতেন প্রতিমা। পরবর্তী কালে সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। দেবীপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে কুমোরটুলি থেকেই মা আসেন চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। পঞ্চমীর দিন মাকে বেনারসি শাড়ি ও নানা ধরনের সোনার গহনা পরানো হয়।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠীর দিন রাত্রিবেলায় এই বাড়িতে হয় বেলবরণ উৎসব। প্রচলিত বিশ্বাস, কৈলাস থেকে মা এসে বেলগাছের তলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে ষষ্ঠীর দিন গভীর রাত্রে বাড়ির মহিলারা মায়ের চার দিকে প্রদক্ষিণ করে তাঁকে বরণ করেন স্বাগত জানান।
সপ্তমীর দিন বাড়িতেই কলাবউ স্নান করানো হয়। আগে এই বাড়িতে ডাকের সাজের প্রতিমা হলেও পরে পরিবর্তন করা হয়েছে। অতীতে এই বাড়িতে বলিদান হত। সপ্তমী ও সন্ধিপূজায় একটি করে ও নবমীর দিন তিনটি পাঁঠাবলি দেওয়া হত। সেই প্রথা আজ বন্ধ, বর্তমানে প্রতীকী বলিদান হয় পুজোর সময়।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এই বাড়িতে ভোগ রান্না করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। খিচুড়ি, নানা রকমের ভাজা, শুক্তনি, চিংড়িমাছের মালাইকারি, ভেটকিমাছের ঘণ্ট, লাউচিংড়ি, চাটনি, পায়েস, পানতুয়া ইত্যাদি নানান রকমের ভোগ রান্না করে দেবীকে নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন হয় রান্নাপুজো, যাকে বলা হয় দুর্গা-অরন্ধন দিবস। অর্থাৎ আগের দিন সব রান্না করে দশমীতে তা নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন ভোগে থাকে পান্তাভাত, ইলিশমাছের অম্বল, চাতলার চাটনি, কচুশাক ইত্যাদি।
গাওয়া হচ্ছে প্রার্থনাসংগীত।
‘ভজিতে তোমারে শিখি নাই কভু / ডাকি শুধু তোমায় মা বলে।/ সাধনার রীতি জানি নাকো নীতি / পূজি শুধু তোমায় আঁখিজলে…” – প্রতি বছর দশমীর দিন বিসর্জনের জন্য দেবীকে নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে পরিবারের সদস্যরা এই গানটির মাধ্যমে প্রণাম জানান মা দুর্গাকে। ১৬ পঙক্তির এই স্তব কে রচনা করেছিলেন বা কবে থেকে মায়ের বিদায়বেলায় এই প্রার্থনাসংগীত গীত হচ্ছে সে সম্পর্কে পরিবারের সূত্রে কিছু জানা যায় না। প্রার্থনাসংগীতের পরে রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী দুর্গাদাসীর নামে জয়ধ্বনি করা হয়।
ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
আরও পড়ুন
একবার গদাই এঁকে দিয়েছিলেন কামারপুরের লাহাবাড়ির মা দুর্গার চোখ
ভট্টাচার্য বংশের ‘মঠের বাড়ির দুর্গোৎসব’-ই সিঙ্গি গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা
জমিদারি চলে গেলেও ঐতিহ্য হারায়নি জয়নগর মিত্রবাড়ির ৩০০ বছরের পুজোর