রাখি পূর্ণিমার পবিত্র উৎসব হল ভারতীয় উপমহাদেশের ভাই বোনের প্রেম প্রীতির অন্যতম বন্ধন উৎসব। এই উৎসব যত না উৎসবের আনন্দ তার চেয়েও অনেক বেশি দায়িত্বের।
এই বন্ধন যেন সবার কাছেই এক আশীর্বাদ। আর তাই সাম্প্রতিক অতীতের রবি ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসব যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়, তেমনই সনাতন হিন্দু সংষ্কৃতি আমাদের কাছে রাখির যা ইতিহাস তুলে ধরে তা ভাই বোনের মায়া মমতা ভরা সম্পর্ককে রাখির বন্ধনের মাধ্যমে আরও বেশি সুদৃঢ় করে।
কলকাতায় রাখিবন্ধন উৎসব শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ২০ জুলাই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই আন্দোলন প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের দিন ঠিক হয়। সেই দিন হিন্দু মুসলমান একে অপরের হাতে সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসাবে বেঁধে দেন রাখি। সেই থেকে চল হয় রাখি উৎসবের।
তবে বাঙালি ছাড়া মূলত অবাঙালি সম্প্রদায় পাঞ্জাবি ও মারোয়াড়িদের মধ্যে এই রাখিপূর্ণিমার উৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। তবে রাখি পরানোর বিষয়টির সঙ্গে যোগ রয়েছে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনিরও।
শ্রীকৃষ্ণ ও দ্রৌপদী-
মহাভারতের কাহিনি থেকে জানা যায়, একটি যুদ্ধের সময় শ্রীকৃষ্ণের হাতের কবজিতে আঘাত লাগে। সেই ক্ষত থেকে রক্তপাত হতে শুরু হয়। তা দেখতে পেয়ে দ্রৌপদী নিজের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। তার পর থেকেই শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে নিজের বোন সখী হিসাবে মানতে শুরু করেন। এই উপকারের প্রতিদান দেওয়ারও অঙ্গীকার করেন কৃষ্ণ। এর পর পাশা খেলায় পান্ডবরা সর্বস্ব খুইয়ে যখন দ্রৌপদীকে কৌরবদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়, দ্রৌপদীর চরম বিপদ এসে পড়ে। দুঃশাসন তাঁর বস্ত্রহরণ করতে গেলে দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণকে প্রাণ ভরে স্মরণ করেন। দ্রৌপদীর সম্মানরক্ষা করে সেই শ্রীকৃষ্ণ সেই প্রতিদান দেন। সেই সময় থেকে এই ভাবেই রাখিবন্ধন উৎসবের প্রচলন হয়।
যম ও যমুনা-
পুরাণ কথা অনুযায়ী, এক বার যমুনা নদী যমরাজকে রাখি পরিয়েছিলেন। তাতে খুশি হয়েছিলেন যমরাজ। তিনি যমুনা নদীকে অমরত্বের আশীর্বাদ দেন। তার পর থেকেই এটাই প্রচলিত বিশ্বাস যে, যদি কোনো বোন বা দিদি ভাই বা দাদার হাতে রাখি বাঁধে তা হলে সে অমরত্ব প্রাপ্ত হবে।
শ্রী গণেশের পুত্র শুভ ও লাভ-
আবার এও কথিত আছে ভগবান শ্রী গণেশের দুই পুত্র শুভ এবং লাভ একবার খুব জেদ ধরে তারা তাদের বোনের কাছেই রাখী পরবেন। উপায় না দেখে ভগবান গণেশ তার দুই স্ত্রী ঋদ্ধি এবং সিদ্ধির গর্ভ থেকে এক কন্যার সৃষ্টি করেন যিনি সকলের কাছে সন্তোষী মাতা রূপে পরিচিত তিনি। তিনি তারপর দুই দাদা শুভ এবং লাভের হাতে রাখী বেঁধে দেন। সেই থেকেও রাখী বন্ধন উৎসব ভাইদের কল্যাণ কামনায় করা হয় বলে জানা গেছে।