আফগানিস্তান: ২৮৪ (রহমানুল্লাহ গুরবাজ ৮০, ইকরাম আলিখিল ৫৮, আদিল রশিদ ৩-৪২, মার্ক উড ২-৫০)
ইংল্যান্ড: ২১৫ (৪০.৩ ওভারে) (হ্যারি ব্রুক ৬৬, ডাউইড মালান ৩২, রশিদ খান ৩-৩৭, মুজিব উর রহমান ৩-৫১)
দিল্লি: বড়ো অঘটন ঘটে গেল বিশ্বকাপে। গত বারের বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডকে সহজেই হারিয়ে দিল আফগানিস্তান। মোটামুটি একপেশেই হল খেলা। ইংল্যান্ডের দিক থেকে তেমন লড়াই দেখা গেল না। একমাত্র হ্যারি ব্রুক ছাড়া ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটারই সে ভাবে আফগান বোলারদের সামলাতে পারলেন না। বিশেষ করে রশিদ খান, মুজিব উর রহমান এবং মোহম্মদ নবির মতো স্পিনারদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারলেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা।
রবিবার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠায় ইংল্যান্ড। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আফগানিস্তান পৌঁছে যায় ২৮৪-তে। প্রায় তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পিছনে রহমানুল্লাহ গুরবাজের অবদান অনস্বীকার্য। গুরবাজ ছিলেন প্রচণ্ড মারমুখী। করলেন ৫৭ বলে ৮০ রান। এ ছাড়াও ইকরাম আলিখিল করেন ৬৬ বলে ৫৮ রান।
জয়ের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেল ২১৫ রানে। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৯.৩ ওভার বাকি থাকতেই। ৩৭ রান দিয়ে রশিদ খান তুলে নিলেন ৩ উইকেট। সমসংখ্যক উইকেট পেলেন মুজিব উর রহমান ৫১ রান দিয়ে। মোহম্মদ নবি মাত্র ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। ফলে ৬৯ রানে হেরে গেল ইংল্যান্ড। ৩ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৯ নম্বর ব্যাটার হিসাবে ২৮ রান করার সুবাদে মুজিব হলেন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’।
নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট ইংল্যান্ডের
ইনিংস শুরু করার মুখেই বিপাকে পড়ে ইংল্যান্ড। দলের ৩ রানেই ফজলহক ফারুকির বলে এলবিডব্লিউ হন জনি বেয়ারস্টো। এর পর নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়তে থাকে। ব্রুক আর কিছুটা ডাউইড মালান ছাড়া কেউই আফগান বোলারদের মুখে দাঁড়াতে পারলেন না। কোনো উইকেটের জুটিই বলার মতো অবদান রাখতে পারেনি। আজ ইংল্যান্ডের হাল কেমন ছিল তা একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যায়। সবচেয়ে বেশি রান ওঠে তৃতীয় উইকেটের জুটিতে – ৩৫ রান। এ দিন ইংল্যান্ড কী রকম মোকাবিলা করল আফগানিস্তানের, তার প্রমাণ এই রান।
ব্রুক আর মালান ছাড়া ইংল্যান্ডের ছ’ জন ব্যাটার দুই অঙ্কের রানে পৌঁছোলেন। কিন্তু কেউই সেই রান করতে পারলেন না যাতে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া যায়। ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট পড়ল ৩, ৩৩, ৬৮, ৯১, ১১৭, ১৩৮, ১৬০, ১৬৯, ১৯৮ এবং ২১৫ রানে। এতেই স্পষ্ট বোঝা যায়, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এ দিন কোনো লড়াই-ই দিতে পারল না ইংল্যান্ড।
আফগান ইনিংসের ভিত গড়ে দিল প্রথম উইকেটের জুটি
এ দিন খুব ভালো শুরু করে আফগানিস্তান। রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জারদান প্রথম উইকেটের জুটিতে করেন ১১৪ রান। এঁদের মধ্যে গুরবাজ ছিলেন প্রচণ্ড মারমুখী। তিনি ইংল্যান্ডের কোনো বোলারকেই রেয়াত করছিলেন না। তাঁর সঙ্গে যথাযথ ভাবে সাথ দিচ্ছিলেন ইব্রাহিম জারদান। দলের ১১৪ রানে যখন জারদান আউট হলেন তখন তাঁর সংগ্রহে ছিল ২৮ রান। এর থেকেই বোঝা যায় কতটা মারমুখী ছিলেন গুরবাজ। আদিল রশিদের বলে জো রুটকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান জারদান।
১১৪ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর দ্রুত উইকেট পড়তে থাকে আফগানদের। ৮ রান পরেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট পড়ে যায়। গুরবাজের দুর্ভাগ্য, তিনি রান আউট হন ৫৭ বলে ৮০ রান করে। ১৯০ রানের মধ্যে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ায় মনে হয়েছিল আফগানিস্তানের স্কোর আড়াইশো ছাড়াবে না। কিন্তু শেষ ৪ উইকেটে তারা যোগ করে ৯৪ রান। এর জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য রশিদ খান, মুজিব উর রহমানের মতো টেল-এন্ডারদের। নির্ধারিত ৫০ ওভারের মাত্র ১ বল থাকতে আফগানিস্তান ২৮৪ রানে অল আউট হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার আদিল রশিদ। তিনি ৪২ রান দিয়ে ৩টি উইকেট দখল করেন।
লিগ টেবিলে কে কোথায়
এ দিনের ম্যাচের পর ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান লিগ টেবিলে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থাকল। দুটি দলই ৩টি করে ম্যাচ খেলে ১টিতে জিতে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু নেট রান রেটের সুবাদে আপাতত এক ধাপ উপরে থাকল ইংল্যান্ড। এখন লিগ টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ভারত, দ্বিতীয় স্থানে নিউজিল্যান্ড। দুটি দলই ৩টি করে ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু যথারীতি নেট রান রেটের বিচারে ভারত এগিয়ে রয়েছে। সে দিক দেখতে গেলে নেট রান রেট সবচেয়ে ভালো দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু তারা যেহেতু ২টি ম্যাচ খেলে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে, তাই আপাতত তারা রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: ভারতও তিনে তিন, বুমরাহ-সিরাজ আর স্পিনার ত্রয়ীর জাদুতে পাকিস্তান কাত