শ্রীলঙ্কা: ২০৯ (৪৩.৩ ওভার) (কুশল পেরেরা ৭৮, পাথুম নিসঙ্ক ৬১, অ্যাডাম জাম্পা ৪-৪৭, প্যাট কামিন্স ২-৩২)
অস্ট্রেলিয়া: ২১৫-৫ (৩৫.২ ওভার) (জোশ ইংলিস ৫৮, মিচেল মার্শ ৫২, দিলশান মদুশঙ্কা ৩-৩৮)
লখনউ: জয়ের জন্য দরকার ছিল ১ রানের। দুনিথ ওয়েলালাগের বল সোজা তুলে দিলেন মার্কাস স্টয়নিস। বল গিয়ে পড়ল দর্শক গ্যালারিতে। সোজা ছক্কা। কার্যত ঘরের মাঠে ছয় মেরে এ বারের বিশ্বকাপে নিজের দেশকে প্রথম জয়ের স্বাদ দিলেন স্টয়নিস। ঘরের মাঠই তো, কারণ স্টয়নিস আইপিএল-এ লখনউ সুপার জায়েন্টসের হয়ে খেলেন।
সোমবার লখনউয়ের ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ী একানা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট নেয় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ৪৩.৩ ওভারেই তারা অল আউট হয়ে যায়। তাদের সংগ্রহ ২০৯। মূলত অ্যাডাম জাম্পার লেগ স্পিন তারা সামলাতে পারেনি। ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট দখল করেন জাম্পা। অস্ট্রেলিয়া করে ৫ উইকেটে ২১৫। ফলে ৫ উইকেটে জিতে যায় তারা। জাম্পা ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন।
শুরুটা ভালো করেও শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ধস
শ্রীলঙ্কা কিন্তু এ দিন বেশ ভালো শুরু করেছিল। প্রথম উইকেটের জুটিতে যে দল ১২৫ রান তুলতে পারে তারা আর মাত্র ৮৪ রান যোগ করে অল আউট হয়ে যাবে এটা কেউ ভাবতেও পারেননি। মনে হয়েছিল, এ দিন শ্রীলঙ্কাও বেগ দেবে অস্ট্রেলিয়াকে। ফলে এ বারের বিশ্বকাপে হারের হ্যাটট্রিক হয়তো এড়াতে পারবে না অজিরা। কিন্তু এ তো ক্রিকেট খেলা!
২১.৪ ওভারে কুশল পেরেরা এবং পাথুম নিসঙ্কের জুটি ১২৫ রান তোলার পর অস্ট্রেলিয়া প্রথম আঘাত হানে। প্যাট কামিন্সের বলে ডেভিড ওয়ার্নারকে ক্যাচ দিয়ে ৬৭ বলে ৬১ রান করে আউট হন নিসঙ্ক। তখনও কুশল পেরেরা রয়েছেন ক্রিজে। কার্যত তাঁরই ব্যাটিং-এর সুবাদে শ্রীলঙ্কা পৌঁছোয় ১৫৭-য়। তার পর ১ উইকেটে ১৫৭ থেকে শ্রীলঙ্কার দাঁড়ায় ২০৯-১০-এ। অর্থাৎ শেষ ৯ উইকেটে শ্রীলঙ্কা তোলে মাত্র ৫২ রান। ৮২ বলে ৭৮ রান করে কামিন্সের বলে কুশল বোল্ড আউট হতেই শ্রীলঙ্কা ইনিংসে ধস নামে। প্রথম কাজটা কামিন্স করে দেওয়ার পর বাকি কাজটা সেরে ফেলেন জাম্পা। সঙ্গে পান মিচেল স্টার্ক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। আর মাত্র চরিত অসলঙ্কা (৩৯ বলে ২৫ রান) ছাড়া শ্রীলঙ্কার বাকি ব্যাটাররা করেন ৯, ৮, ৭, ২, ২, ০, ৪ এবং ০ রান (নট আউট)।
৮৮ বল বাকি থাকতেই জয় অস্ট্রেলিয়ার
জয়ের জন্য ২১০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৪ রানের মধ্যে ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভ স্মিথকে হারায়। দু’জনকেই এলবিডব্লিউ আউট করেন দিলশান মদুশঙ্কা। এঁদের মধ্যে স্টিভ স্মিথ তাঁর রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ক্রিকেটভক্তদের মনে প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে – তা হলে কি এই ২১০ রানের লক্ষ্যমাত্রাতেও পৌঁছোতে পারবে না অস্ট্রেলিয়া? এখানেই দলের হাল ধরেন মিশেল মার্শ এবং মার্নাস লাবুশানে।
মার্শের দুর্ভাগ্য। দলের ৮১ রানে রান আউট হয়ে যান তিনি ৫১ বলে ৫২ রান করে। এর পর ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন লাবুশানে ও জোশ ইংলিস। তাঁরা দলের রানকে পৌঁছে দেন ১৫৮-য়। ৬০ বলে ৪০ রান করে মদুশঙ্কার বলে করুণারত্নেকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান লাবুশানে। ইংলিসের সঙ্গী হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৫৯ বলে ৫৮ রান করে দুনিথ ওয়েলালাগের বলে থিকসানাকে ক্যাচ দিয়ে জোশ ইংলিস যখন ফেরত যান, তখন জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার আর দরকার ১৮ রান। বাকি কাজটা ব্যাটিং-এ ঝড় তুলে সেরে ফেলেন ম্যাক্সওয়েল (২১ বলে ৩১ রান নট আউট) ও স্টয়নিস (১০ বলে ২০ রান নট আউট)। ৮৮ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া।
টেবিলে অষ্টম ও নবম স্থানে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা
এ দিনের জয়ের ফলে লিগ টেবিলে দু’ ধাপ উপরে উঠে এল অস্ট্রেলিয়া। ১০ দেশের খেলায় একেবারে দশম স্থানে ছিল তারা। ৩ ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তারা এল অষ্টম স্থানে। ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়া, ৪টি দেশই ৩ ম্যাচ থেকে ২টি করে পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু সবচেয়ে কম নেট রান রেট থাকায় অস্ট্রেলিয়া এই দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে নীচে রয়েছে। আর এ দিনের হারের পর শ্রীলঙ্কার হল হারের হ্যাটট্রিক। তারা এখনও কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে না পারায় তারা রয়েছে নবম স্থানে। নেট রান রেটের বিচারে নেদারল্যান্ডসের এক ধাপ ওপরে।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: অবিশ্বাস্য জয়, আফগান স্পিনের জাদুতে আত্মসমর্পণ করল ইংল্যান্ড