নিজস্ব প্রতিনিধি: এ ভাবেও কামব্যাক করা যায়! এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম চারটি ম্যাচে বসিয়ে রাখা হয়েছিল মোহম্মদ শামিকে। পঞ্চম ম্যাচের আগে হার্দিক পাণ্ড্য গোড়ালিতে চোট পাওয়ায় মোহম্মদ শামি দলে আসেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম ম্যাচে নিলেন ৫ উইকেট। এর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ উইকেট। এবং বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নিলেন আবার ৫ উইকেট।
চলতি বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচ থেকে ১৪ উইকেট নিজের ঝুলিতে ভরে নিলেন মোহম্মদ শামি। এবং ভারতীয় বোলার হিসাবে করলেন রেকর্ড। ২০১৫-এর বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশের পর আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপে শামির দখলে এল ৪৫ উইকেট। ভারতীয় বোলার হিসাবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট তুলে নিলেন তিনি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল জাহির খান এবং জাভাগল শ্রীনাথের দখলে। তাঁদের সংগ্রহে রয়েছে ৪৪টি করে উইকেট। কিন্তু জাহির ৪৪টি উইকেট পেয়েছিলেন বিশ্বকাপের ২৩টি ম্যাচ থেকে। আর শ্রীনাথ ৪৪টি পান বিশ্বকাপের ৩৪ ম্যাচ থেকে। সুতরাং শামির ১৪ ম্যাচে ৪৫টি উইকেট পাওয়া রেকর্ড তো বটেই, এক অনন্য রেকর্ড।
বিশ্বকাপে ৫টি করে উইকেট নেওয়াতেও রেকর্ড শামির
এ দিন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে আবার ৫ উইকেট নিলেন মোহম্মদ শামি। এই নিয়ে এ বারের বিশ্বকাপে ২ বার। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও পেয়েছিলেন ৫ উইকেট। এবং ২০১৫-তে বিশ্বকাপে তাঁর আত্মপ্রকাশের পর থেকে ৩টি বিশ্বকাপে মোট ৩ বার ৫ উইকেট পেলেন। আর একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৫টি উইকেট দখল করলেন ৪ বার। এই ৫ উইকেট নেওয়ার ব্যাপারেও ভারতীয় বোলার হিসাবে রেকর্ড করলেন শামি। এ ব্যাপারে তিনি পেরিয়ে গেলেন জাভাগল শ্রীনাথকে। শ্রীনাথ একদিনের ম্যাচে ৩ বার ৫টি করে উইকেট পেয়েছিলেন।
টিমে কী করে এলেন শামি
অথচ হার্দিক পাণ্ড্য গোড়ালিতে চোট না পেলে মোহম্মদ শামি এ বারের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেতেন কি না সন্দেহ। এ বারের বিশ্বকাপে ভারতের অভিযান বেশ ভালোই শুরু হয়। একের পর এক জয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল চতুর্থ ম্যাচ। আর সেই ম্যাচে চোট পেলেন হার্দিক পাণ্ড্য। কবে তিনি সুস্থ হয়ে দলে ফিরবেন কেউ জানে না। এত দিন টিম গড়া নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছিল না ভারত। কিন্তু হার্দিকের চোট টিম ম্যানেজমেন্টকে চিন্তায় ফেলে দিল। হার্দিকের জায়গায় কে খেলবে?
হার্দিক এক বিরল ক্রিকেটার। করেন ফাস্ট বল। কিন্তু ব্যাটিং-এও দুর্ধর্ষ। এ রকম অল রাউন্ডার পাওয়া দুষ্কর। তা হলে হার্দিকের জায়গায় কে খেলবেন? একজন অতিরিক্ত বোলার নেওয়া হবে নাকি একজন অতিরিক্ত ব্যাটার নেওয়া হবে। এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেলতে লাগল টিম ম্যানেজমেন্টের মনে।
ভারতের চিন্তার মূল কারণ হল, দলের চলতি লাইন-আপে, ব্যাটিং-এর পাশাপাশি ভালো বোলিং করতে পারেন, এমন কেউ নেই। ২০১১-এর বিশ্বকাপের সময় বা ২০০০-এর গোড়ার দিকে ভাবুন। তখন ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগ, সৌরভ গাঙ্গুলি, যুবরাজ সিং এবং সুরেশ রায়না। স্পেশালিস্ট বোলারকে বিশ্রাম দিয়ে এঁরা বেশ কয়েক ওভার হাত ঘোরাতে পারতেন। শুধু তা-ই নয়, এঁরা উইকেট-শিকারিও ছিলেন।
গত আগস্টে যখন বিশ্বকাপে ভারতের দল ঘোষণা করা হয়, তখনই হার্দিক পাণ্ড্যকে কার্যত তৃতীয় সিমার হিসাবে টিমে নেওয়া হয়। সিমার হিসাবে এশিয়া কাপে এবং এ বারের বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে হার্দিক বেশ সফল। সুতরাং হার্দিক টিমে থাকায়, স্পেশালিস্ট বোলার কম আছে, এই চিন্তা আর থাকল না। হার্দিক জখম হতেই, সেই ভয়টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। তা হলে হার্দিক টিমে যে ভূমিকা পালন করতেন, সেটা কে করবেন?
এ বার সকলের চোখ অধিনায়ক রোহিত শর্মার দিকে। ২২ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কী দল ঘোষণা করেন তিনি। হার্দিক টিমে নেই। তাই ৬ নম্বরে ব্যাটার হিসাবে সূর্যকুমার যাদবকে নেওয়া হল। কিন্তু শুধু সূর্যকুমারকে নিলে তো হবে না। ভারতের একজন তৃতীয় সিমার দরকার। তাই শার্দূল ঠাকুরকে বসিয়ে আনা হল চার ম্যাচ বসে থাকা মোহম্মদ শামিকে।
রোহিতের সিদ্ধান্ত কত সঠিক প্রমাণ করলেন শামি
রোহিতের এই সিদ্ধান্ত যে কত সঠিক তা প্রমাণিত হয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে। ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে শামি সে দিনই ভারতের একমাত্র বোলার হলেন যিনি বিশ্বকাপে ২ বার ৫টি করে উইকেট পেলেন এবং ৪ বা তার বেশি উইকেট পেলেন ৫ বার।
ভারতের পরের ম্যাচ ছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লখনউয়ে, রবিবার। স্বাভাবিক ভাবেই রোহিত একই টিম রেখে দিলেন। সেই ম্যাচে প্রথম ব্যাট করে ভারত ২২৯ রানে অল আউট হয়ে গেল। এ বার দায়িত্ব পড়ল সিমারদের উপরে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করার। প্রথমে জসপ্রীত বুমরাহ ইংল্যান্ডের ইনিংসে ফাটল ধরালেও বাকি কাজটা করলেন শামি। ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিলেন তিনি। পাশাপাশি জসপ্রীতের ৩ উইকেট। ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেল মাত্র ১২৯ রানে। সে দিন শামি প্রমাণ করলেন তাঁর দল ২ জন স্পিনার আর ৩ জন সিমার নিয়ে এই বিশ্বকাপ-বৈতরণী সহজেই পেরিয়ে যাবে। ষষ্ঠ বোলারের দরকার হবে না।
আরও পড়ুন