দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৫৭-৪ (রাসি ফান ডেয়ার ডুসেন ১৩৩, কুইন্টন ডি কক ১১৪, টিম সাউদি ২-৭৭)
নিউজিল্যান্ড: ১৬৭ (৩৫.৩ ওভার) (গ্লেন ফিলিপস ৬০, কেশব মহারাজ ৪-৩১, মার্কো ইয়ানসেন ৩-৪৬)
পুনে: লিগের শেষ প্রান্তে এসে নিউজিল্যান্ড বেলাইন হয়ে যাবে না তো? এ বারের বিশ্বকাপে লিগের খেলা খুব ভালো শুরু করেছিল তারা। প্রথম ৪টি ম্যাচে জয়। এর পর হয়ে গেল হারের হ্যাটট্রিক। এর জন্যই নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে তাদের সমর্থকদের মনে। ৭ ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড আপাতত চলে গেল লিগ টেবিলে চতুর্থ স্থানে।
বুধবার পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাট করতে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করার পুরো ফায়দা তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় উইকেটে কুইন্টন ডি কক এবং রাসি ফান ডেয়ার ডুসেনের ২০০ রানের পার্টনারশিপ এবং পরে ডেভিড মিলারের ৩০ বলে ৫৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গেল রানের পাহাড়ে। ডি কক এবং ডুসেনের শতরানে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৪ উইকেটে ৩৫৭ রান।
৩৫৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে গিয়ে মাত্র ১৬৭ রানে গুটিয়ে গেল কিউয়িরা। কেশব মহারাজ আর মার্কো ইয়ানসেনের বলের মোকাবিলাই করতে পারল না তারা। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে কিউয়িরা বেশ দুঃখ পেয়েছিল। কিন্তু এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার তাদের মন ভেঙে দিল। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯০ রানে জিতে গিয়ে চলে গেল লিগ টেবিলের শীর্ষে। ৭ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তারা অবশ্য ৬ ম্যাচ থেকে ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু নেট রানরেটের বিচারে দক্ষিণ আফ্রিকা আপাতত এক নম্বর স্থানে থাকল।
দ্বিতীয় উইকেটেই ঘুরে দাঁড়াল দক্ষিণ আফ্রিকা
ইনিংসের শুরুতেই আউট হয়ে যান দলের অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ট্রেন্ট বোল্টের মিচেল স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ২৪ রান প্যাভিলিয়নে ফিরে যান বাভুমা। দলের রান তখন ৩৮। ডুসেন সঙ্গী হন অপর ওপেনার ডি ককের। খেলার মোড় পুরো ঘুরে যায়। ৩১.৩ ওভারে তাঁরা যোগ করেন ২০০ রান। দু’ জনেই সেঞ্চুরি করেন। দলের ২৩৮ রানের মাথায় কুইন্টন ডি কক ১১৬ বলে ১১৪ রান করে টিম সাউদির বলে গ্লেন ফিলিপসকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ডি কক।
ডুসেনের সঙ্গী হন ডেভিড মিলার। রানের ঝড় ওঠে। মাত্র ৭.১ ওভারে তাঁরা যোগ করেন ৭৮ রান। দলের ৩১৬ রানের মাথায় সাউদির বলে বোল্ড হন ডুসেন। ১১৮ বলে ১৩৩ রান করেন তিনি। এর পর মিলারকে সঙ্গে নিয়ে সংহারপর্ব শুরু করেন হাইনরিখ ক্লাসেন। মিলার ও ক্লাসেন মাত্র ১৬ বলে তোলেন ৩৫ রান। শেষ পর্যন্ত মিলার আউট হয়ে যান ৩০ বলে ৫৩ করে। তাঁকে তুলে নেন জেমস নিশাম। ইনিংসে মাত্র ১টা বল বাকি ছিল। সেই বলে আইডেন মার্করাম ৬ মেরে দলের রান পৌঁছে দেন ৩৫৭-য়। ক্লাসেন ৭ বলে ১৫ এবং মার্করাম ১ বলে ৬ রান করে নট আউট থাকেন।
শেষ উইকেটে ৩৪ রানের পুরোটাই গ্লেন ফিলিপসের
জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫৮ রান তাড়া করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড গোড়া থেকে ধসে পড়তে শুরু করে। একমাত্র দ্বিতীয় উইকেটে ৩৭ রান এবং দশম উইকেটে ৩৪ রান যোগ হওয়া ছাড়া কোনো উইকেটের জুটিতেই উল্লেখযোগ্য রান হয়নি। গ্লেন ফিলিপস, উইল ইয়ং এবং ড্যারিল মিচেল ছাড়া কোনো ব্যাটার দুই অঙ্কের রানে পৌঁছোতেই পারেননি। মার্কো ইয়ানসেনের বলে মার্করামকে ক্যাচ দিয়ে দলের ৮ রানে ডেভন কনওয়ে আউট হয়ে যাওয়ার পরে উইল ইয়ং-এর সঙ্গী হন রাচিন রবীন্দ্র। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ৩৭ রান। দলের ৪৫ রানে সেই ইয়ানসেনেরই শিকার হন রবীন্দ্র। অন্যতম ওপেনার উইল ইয়ং-এর সঙ্গী হন ড্যারিল মিচেল। কিন্তু এক দিকে মিচেল উইকেট ধরে রাখার চেষ্টা করলেও উইল ইয়ং এবং অধিনায়ক টম ল্যাথাম ঘন ঘন আউট হয়ে যান।
এর পর মিচেলের সঙ্গী হন গ্লেন ফিলিপস। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিরুদ্ধে একমাত্র ফিলিপসই কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু তাঁর একার লড়াই কোনো কাজে দেয়নি। অন্য প্রান্তে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়তে থাকে। একে একে চলে যান ড্যারিল মিচেল, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, জেমস নিশাম এবং ট্রেন্ট বোল্ট। শেষ পর্যন্ত দশম উইকেটে ১১ নম্বর প্লেয়ার ম্যাট হেনরিকে সঙ্গী করে যত দূর সম্ভব ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ফিলিপস। দশম উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ৩৪ রান। মজার কথা হল শেষ উইকেটে ৩৪ রানের সব ক’টাই আসে ফিলিপসের ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত ৫০ বলে ৬০ রান করে গেরাল্ড কোয়েৎজির বলে কাগিসো রাবাদার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ফিলিপস। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ১৪.৩ ওভার বাকি থাকতেই কিউয়িরা অল আউট হয়ে যায় ১৬৭ রানে।
ইনিংসের গোড়ার দিকে মার্কো ইয়ানসেনের মতো ফাস্ট বোলার এবং পরে কেশব মহারাজের মতো স্পিন বোলারের মোকাবিলা করতেই পারল না কিউয়িরা। কেশব মহারাজ ৪৬ রানে ৪ উইকেট এবং মার্কো ইয়ানসেন ৩১ রানে ৩ উইকেট দখল করেন। প্রোটিয়ারা জিতে যায় ১৯০ রানে। ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন রাসি ফান ডেয়ার ডুসেন।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: ফখর জামান, আবদুল্লাহ শফিকের ব্যাটিং-এ ভর করে বাংলাদেশকে সহজেই হারাল পাকিস্তান