খবরঅনলাইন ডেস্ক: ‘ভারতের শ্রেষ্ঠ পর্যটন গ্রাম’ হিসাবে স্বীকৃতি পেল মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী গ্রাম। কিরীটেশ্বরী মন্দিরের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম। কিরীটেশ্বরী গ্রামকে এই খেতাব দেওয়া হয়েছে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের তরফে।
দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ৭৯৫টি আবেদন জমা পড়েছিল। তাদের মধ্যে ২০২৩ সালের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম প্রতিযোগিতা’ হয়েছিল। আর সেই প্রতিযোগিতাতেই সেরার শিরোপা পেল কিরীটেশ্বরী গ্রাম। এই খেতাব পাওয়ার খবরটি টুইট করে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ জন্য তিনি গ্রামের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটেশ্বরীকে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি আবেদনের মধ্যে ২০২৩ সালের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম প্রতিযোগিতা’ হয়েছিল। সেখানেই এই নির্বাচন হয়েছে৷ আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে হবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। আমি ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা!’’
কিরীটেশ্বরী গ্রামের আদত নাম ‘কিরীটকণা’ বা ‘কিরীটকোনা’। কিন্তু কিরীটেশ্বরী মন্দিরের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম লোকমুখে কিরীটেশ্বরী নামেই পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ কোর্ট রোড রেলস্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই কিরীটেশ্বরী গ্রাম। বৈষ্ণবধর্মের অন্যতম পীঠস্থান ডহপাড়া ধাম থেকেও এর দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।
কিরীটেশ্বরী মন্দির শক্তিপীঠগুলির অন্যতম। এখানে সতীর ‘কিরীট’ অর্থাৎ মুকুটের কণা পড়েছিল। তাই এই দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হয়। যে হেতু এখানে দেবীর কোনো অঙ্গ পড়েনি, তাই এই স্থানকে অনেক তন্ত্রবিদ ‘পূর্ণ পীঠস্থান’ না বলে ‘উপপীঠ’ বলে থাকেন।
কিরীটেশ্বরী মন্দির।
তবে শুধু কিরীটেশ্বরী মন্দিরই নয়, ভাগীরথীর পশ্চিম পারের এই গ্রামে বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। জঙ্গলাকীর্ণ এই সব ধ্বংসাবশেষ অতীত গৌরবের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই কিরীটেশ্বরী মন্দির শাক্তসাধনার অন্যতম স্থল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙে পড়ে। তার পরে ১৯ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন মন্দির নির্মাণ করান।
গ্রামের বাসিন্দারা অধিকাংশই মুসলিম। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের সহায়তাতেই রক্ষিত হচ্ছে হিন্দুধর্মের এই শক্তিপীঠ। মন্দিরের পরিচালন কমিটিতেও রয়েছেন একাধিক মুসলিম সদস্য। গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছে এই কিরীটেশ্বরী গ্রাম, তারই স্বীকৃতিস্বরূপ মিলেছে ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ হওয়ার খেতাব।
আরও পড়ুন