বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভারতসহ সারা বিশ্বের যুবকদের মধ্যে একটি নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যার নাম ‘ডুম স্পেন্ডিং’। এই প্রবণতায় যুবকরা অতিরিক্ত খরচ করছেন দামি পোশাক, ভ্রমণ এবং গ্যাজেটের মতো বিলাসবহুল জিনিসের উপর। ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা থেকে তারা এই অতিরিক্ত ব্যয় করছেন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বাস্তবতা থেকে পালানোর একটি উপায় হিসাবেই তারা এটাকে বেছে নিচ্ছেন।
‘ডুম স্পেন্ডিং’ বলতে এমন এক পরিস্থিতিকে বোঝায়, যেখানে কেউ ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে অযাচিত কেনাকাটায় লিপ্ত হন। অনেক যুবকই অনলাইনে খারাপ খবর দেখে হতাশ হয়ে পড়েন এবং এর প্রতিক্রিয়ায় তারা এই ধরনের ব্যয়ে জড়িয়ে পড়েন। কলম্বিয়ার ২৮ বছর বয়সী পাবলিসিস্ট স্টেফানিয়া ট্রনকোসো ফার্নান্দেজের মতে, “যুবকরা মনে করেন যেন সব সময়ই খারাপ খবর আসছে, এবং তারা ভাবছেন, যেন এই পরিস্থিতি কখনো শেষ হবে না।”
বাস্তবতা থেকে পালানোর প্রয়াস
কিংস বিজনেস স্কুলের মনোবিজ্ঞানী ইলভা ব্যাকস্ট্রম ‘ডুম স্পেন্ডিং’-কে অস্বাস্থ্যকর এবং হতাশাব্যঞ্জক প্রবণতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি মানুষের নেতিবাচক আবেগকে খারাপ খরচের অভ্যাসে পরিণত করে, যা ভবিষ্যতে আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেছেন যে বর্তমান প্রজন্ম তাদের পিতামাতার তুলনায় বেশি আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের এই প্রবণতায় জড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত করছে।
মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন
এটি কেবলমাত্র একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। অনেক যুবক অর্থ সঞ্চয় করতে পারছেন না, কারণ বাড়ির দাম অত্যন্ত বেশি। সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরে বাড়ির দাম এত বেশি যে, সেখানকার বাসিন্দাদের পক্ষে সঞ্চয় করা খুবই কঠিন।
স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা ডাইভিক গোয়েল বলেন, “ডুম স্পেন্ডিং হলো বাস্তবতা থেকে পালানোর এক প্রয়াস।” তবে নিজের ব্যবসা শুরু করার পর তার এই অভ্যাস বদলেছে।
ডুম স্পেন্ডিংয়ের মনস্তত্ত্ব
‘ডুম স্পেন্ডিং’ মূলত মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত। ইলভা ব্যাকস্ট্রমের মতে, “অর্থের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনেকটা ব্যক্তিগত সম্পর্কের মতো।” অর্থের সঠিক ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে যুবকরা এই অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
ডুম স্পেন্ডিং থেকে মুক্তির উপায়
এই প্রবণতা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি কৌশল প্রস্তাব করেন, যেমন নগদ অর্থ ব্যবহার করা, যাতে খরচের বাস্তবতা অনুভূত হয়। সচেতনতার মাধ্যমে যুবকরা সঠিকভাবে খরচ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। যদিও ডুম স্পেন্ডিং সাময়িক স্বস্তি দেয়, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় আর্থিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আজকের অর্থনৈতিক অবস্থায় যুবকদের এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন
স্ট্রেস কমাতে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে জুড়ি মেলা ভার অ্যারোম্যাটিক কারিপাতার
যানজট থেকে উদ্ভুত আওয়াজ শরীরে কী প্রভাব ফেলে জেনে নিন