অরূপ চক্রবর্তী, গুয়াহাটি: উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্রমাগত প্রবল বৃষ্টি, ভূমিধস ও নদীর জলস্ফীতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৮ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৪। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য অসম যেখানে ২১টি জেলার ৬.৩৩ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫.১৫ লক্ষ।
অসমের হাইলাকান্দি, শ্রীভূমি, মরিগাঁও, কাছার, শোনিতপুর ও তিনিসুকিয়ায় একাধিক মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়া মণিপুরে বন্যায় এবং অরুণাচল প্রদেশে দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে আরও দু’জনের। চলতি বছরে শুধুমাত্র অসমেই বন্যায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১২-তে।
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যোরহাটের নিয়ামতীঘাট ও তেজপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমার ওপরে বইছে। শ্রীভূমিতে প্রায় ২.৩১ লক্ষ, নগাঁওয়ে ১ লক্ষ এবং কাছারে প্রায় ৮৯ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। ১৫০০-এর বেশি গ্রাম জলের নিচে, এবং ডুবে গেছে ১৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি।
অসম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (ASDMA) জানিয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। বরাক উপত্যকায় বরাক নদী এবং তার উপনদী ধোলেশ্বরী, রুকনি, কুশিয়ারার জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে।
অপরদিকে, মণিপুরে আক্রান্তের সংখ্যা একদিনেই দ্বিগুণ হয়েছে, প্রায় ৫৬ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.০৮ লক্ষে। ৯টি জায়গায় ভূমিধস হয়েছে এবং ১০০০-এর বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে।
অরুণাচল প্রদেশে আঞ্জাও জেলার একটি নির্মাণস্থলে দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে এক শ্রমিকের। বর্তমানে রাজ্যটিতে বন্যা ও ভূমিধসে মোট মৃতের সংখ্যা ১১।
বন্যার কবলে কাজিরঙা, উদ্ধার বাঘের শাবক
ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানে। জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যপ্রাণীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সংলগ্ন উঁচু এলাকাগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে। বুধবার সকালে গহপুর সমষ্টির গমিরির মিরি মাঠে একটি বাঘের শাবক উদ্ধার হয়েছে। বাঁশঝাড়ের ভিতরে আটকে থাকা অবস্থায় শাবকটি স্থানীয় বাসিন্দা মণি দাসের নজরে আসে। বনদপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে।
উল্লেখযোগ্য, কাজিরঙার ষষ্ঠ সংযোজনে জলমগ্নতার কারণে অনেক বন্যপ্রাণী ছড়িয়ে পড়েছে জনবসতিতে, যা মানুষের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।