নিজস্ব প্রতিনিধি: বর্ধিষ্ণুতা, ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির নিরিখে কলকাতার উত্তরে কাশীপুর ও বরানগরের গরিমা আজও অমলিন। অমূল্য পৌরাণিক ইতিহাসের সাক্ষী এই জনাকীর্ণ জনপদের গৌরব। এককালে এখানে ছিল ডাচদের বাসভূমি। এর পর সেটি ইংরেজদের হাতে যায়। শুধুমাত্র বিদেশি ঔপনিবেশিক শক্তির সাক্ষ্যই নয়, এই অঞ্চল একই সঙ্গে বহন করে চলেছে সমৃদ্ধির নিদর্শন।
বহু জমিদার ও ব্যবসায়ী কাশীপুর-বরানগর অঞ্চলে এসে বসতি গড়েন। একসময়ে এখানে তাঁদের নির্মিত সেই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলো আজও বর্তমান। বরানগরের কাছে ছিল এক বিশাল হাট। যেখানে অতীতে পাটের ব্যবসা হত। সেই কারণে লোকজমায়েত এখানে শুরু হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট শিল্পপতি ও কয়লাখনির মালিক ছিলেন বামনদাস মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে কাশীপুরে ব্রিটিশ অ্যাটর্নি জন হার্ট সাহেবের কাছ থেকে বাগানবাড়ি-সহ ৩৫ বিঘা জমি কেনেন। সেখানে বামনদাসবাবু ঠাকুরবাড়ি, বাগান, পুকুর, সিংহ-ফটক ও নবরত্ন কালীমন্দির নির্মাণ করান। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়। কৃপাময়ী কালীর এই মন্দির বামনদাস মুখোপাধ্যায় কালীবাড়ি নামে পরিচিত।
বামনদাস তাঁর নিজের নবরত্ন কালীমন্দিরটি ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম থেকে লোহা ও ইতালিয়ান মার্বেল এনে সাজিয়ে তুলেছিলেন। কালীপুজোর সময় এই মন্দিরপ্রাঙ্গণ গমগম করে। মন্দিরে নিত্যপুজো হয়, তবে বলিপ্রথা নিষিদ্ধ। খুবই জাগ্রত এই দেবী। এককালে কালীপুজো উপলক্ষ্যে বসত যাত্রার আসর। মন্দিরে রয়েছে এক বিশাল নহবতখানা। এই মন্দিরে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। অপার মহিমা ও বৈভবের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রয়েছে এই মন্দির। বামনদাস মুখোপাধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের ভগ্ন নাটমন্দিরটিরও সংস্কারের কাজ করেন। আজও কালীঘাট মন্দিরে তাঁর নামে ফলক দেখতে পাওয়া যায়।
পথনির্দেশ
ডানলপগামী বাসে সিঁথির মোড়। সেখান থেকে অটোতে নামতে হবে বরানগর বাজার। নেমে চার-পাঁচ মিনিট হাঁটলেই মন্দির। মেট্রোতেও আসা যায়। বরানগর মেট্রো স্টেশনে নেমে অটোতে বরানগর বাজার। সেখান থেকে হেঁটে মন্দির। অথবা দমদম মেট্রো স্টেশনে নেমে অটোতে সিঁথি মোড়। তার পর অটোয় বরানগর বাজার এসে চার-পাঁচ মিনিটের হাঁটা।