নিজস্ব প্রতিনিধি: এ বার পুজোয় অঙ্গদানের মতো সামাজিক বার্তা দিচ্ছে ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। ট্যাংরা ঘোলপাড়ার পুজোর এ বার ১০৪তম বছর। তাদের এ বারের থিমের নাম ‘দান’।
পুজো কমিটির কর্মকর্তা সমীর ঘোষ বলেন, রক্তদান নিয়ে আমাদের সমাজে যে উদ্যোগ, যে আগ্রহ দেখা যায় তার সিকিভাগও অঙ্গদানের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। অথচ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আশায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কড়িকাঠ গুনে দিন কাটে বহু রোগীর। কারও দরকার চোখ, কারও বা কিডনি কিংবা লিভার। কেউ বা হাত-পা প্রতিস্থাপনের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করে। সময়মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা না হলে মলিন মুখগুলোকে আরও মলিনতর দেখায়। দিন যায়, রাত যায়, মাস পেরিয়ে বছর ঘোরে – অন্তহীন অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয় না।
সমীরবাবুর কথায়, “পুরাণমতে, সিদ্ধিবিনায়ক গণেশের শিরশ্ছেদের পর দেবাদিদেব মহাদেব দ্বারা হাতির মাথা লাগানোর কাহিনিই প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা। অথচ অঙ্গদানের বিষয় আমরা এখনও কয়েক যোজন দূরে। গোটা পৃথিবীর তুলনায় বাংলা এখনও অঙ্গদানে অনেক পেছনের সারিতে। অদ্ভুত এক মানসিকতা আমাদের। বিজ্ঞানের সাহায্যে বহু প্রতিবন্ধকতাকে আমরা দূর করেছি। কিন্তু এখনও বহু জনের মনের অন্ধবিশ্বাস, অঙ্গদানে পরজন্মে নাকি অঙ্গহানি হয়। এই অবাস্তব কল্পনাকে ভেঙে চুরমার করতেই ১০৪তম বছরে আমাদের ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির নিবেদন, ‘মরণোত্তর অঙ্গদানে পূর্ণ হোক জীবনের জয়গান’।”
সমীরবাবুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বছর ট্যাংরা ঘোলপাড়ার মণ্ডপ একটি হাসপাতালের প্রতিরূপ হিসাবে তুলে ধরা হবে। মডেলের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটার, অস্ত্রোপচাররত ডাক্তার, রোগী, শয্যা, ওষুধ, ওষুধের দোকান ইত্যাদি তুলে ধরা হবে। গ্রিন করিডরের মাধ্যমে আসা কোনো সহৃদয় পরিবারের দান করা চোখ দিয়ে এক দৃষ্টিহীন মেয়ের প্রথম বার দশভুজা দর্শনের এক অনাবিল আত্মতৃপ্তিও দেখানো হবে।
ট্যাংরা ঘোলপাড়ার এই থিম সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন সম্রাট ভট্টাচার্য। থিমশিল্পী সম্রাটবাবু বলেন, “ট্যাংরা ঘোলপাড়ার পুজোয় অঙ্গদানের মতো সামাজিক বার্তা থিমের মাধ্যমে তুলে ধরেছি। কারণ আমাদের দেশ এখনও অঙ্গদান নিয়ে সে ভাবে সচেতন নয়। অঙ্গদানের প্রতি সচেতনতা যাতে বাড়ে সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হাসপাতালে যেখানে দেবতা থাকেন সেখানেই মাতৃপ্রতিমা থাকবে। ভিজ্যুয়াল এফেক্টের মাধ্যমে মডেলের সাহায্যে দেখানো হবে একটি দৃষ্টিহীন বাচ্চা মেয়ে অঙ্গদানের মাধ্যমে পাওয়া চোখ দিয়ে প্রথম বার দুর্গা দর্শন করছে। পুরোটাই ভাস্কর্যের মাধ্যমে দেখানো হবে। হাসপাতালের পরিমণ্ডলে চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে। থিমের আদলেই সামঞ্জস্য রেখে মায়ের সাবেকি সনাতনী রূপ। মা বসে আছেন, অভয় দিচ্ছেন এমন ভঙ্গিমা।”
ছবি: রাজীব বসু
আরও পড়ুন
৮৭তম বছরে কাঁকুড়গাছি মিতালির দুর্গাপুজো তুলে ধরছে ‘ইচ্ছে’-র কাহিনি
আগমনী গান গেয়ে মা দুর্গার আবাহন করা হয় বড়জোড়ার গুপ্ত পরিবারে
৬২তম বর্ষে ‘আগামীর বাংলা’ তুলে ধরবে ঢাকুরিয়ার বাবুবাগান