নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত দুর্গাপুজো তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীন এ বছর শোনাচ্ছে প্রান্তিক মানুষদের সংগ্রামের কথা, বিশেষ করে জীবনসংগ্রামের জোয়াল কাঁধে তুলে নেওয়া মেয়েদের কথা। এই সংগ্রামী মেয়েরাই এ বার তেলেঙ্গাবাগানের পূজা-ভাবনার মূল বিষয়। আর এই ভাবনার কাঠামোটি তৈরি হয়েছে রাঢ় বাংলার টুসু উৎসবের আঙ্গিকে।
তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এ বার ৫৮তম বর্ষ। তাদের থিমের নাম ‘প্রান্তজনের আত্মকথন’। এই সমাজে বহু মানুষ আছেন যাঁরা থাকেন আলোর বৃত্ত থেকে অনেক দূরে, আলোর উৎস থেকে এক ফোঁটা রশ্মিও এঁদের উপরে এসে পড়ে না। এঁরা নিতান্তই অবহেলিত, একপাশে পড়ে থাকা মানুষজন, তাই তো প্রান্তিক। সেই সব প্রান্তিক মানুষের টিকে থাকার প্রাত্যহিক লড়াই, তাদের অদম্য জেদ আর স্বপ্ন-উড়ানের কাহিনি ঘিরেই তৈরি হয়েছে এ বার তেলেঙ্গাবাগানের থিম।
আর এই সংগ্রামী মানুষগুলোর সঙ্গে কোথায় যেন সাদৃশ্য রয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অর্থাৎ রাঢ় বাংলার টুসু-ব্রত-রাখা মেয়েদের। আসলে দুঃখ-দুর্দশার কাহিনি, জীবনসংগ্রামের কাহিনি তো একই রকম, তা সে কলকাতা শহরের শ্রমজীবী ঠোঙাওয়ালি মায়েরাই হোন হোক বা রুক্ষ রাঢ় বাংলার লড়াকু মেয়েরাই হোন। এঁদের সমাজ ও পরিপার্শ্ব আপাতদৃষ্টিতে আলাদা হলেও সংগ্রামের কাহিনিটা তো এক। আর তাকে এক সুতোয় বাঁধবে টুসু গানের সুর ও কথা। টুসু উৎসবের প্রধান উপাদান সংগীত। সেই সংগীতের মাধ্যমেই বহিঃপ্রকাশ ঘটে নারীজীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার।
অঘ্রানসংক্রান্তি থেকে পৌষসংক্রান্তি পর্যন্ত রাঢ় বাংলায় পুরো এক মাস জুড়ে চলে টুসু উৎসব। দুর্গার মতো টুসুও রাঢ় বাংলার ঘরের মেয়ে। তাই তার বিসর্জনের সময় সম্মিলিত কণ্ঠের গানে তৈরি হয় শোকের আবহ। পৌষসংক্রান্তি বা মকরের ভোরবেলায় টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরি রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌদল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে মেয়েরা দলবদ্ধ ভাবে গান গাইতে গাইতে কংসাবতী ও সুবর্ণরেখার তীরে নিয়ে যান।
কথা হচ্ছিল তেলেঙ্গাবাগান পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা অমৃত সাউের সঙ্গে। তাঁর কথায়, “গ্রাম বা শহর, মেয়েরা বাস্তবের মাটিতে লড়াইয়ে থাকলেও তাঁরা যেন কখনও দেবী, আবার কখনও মানবী মা। এই দুইয়ের মিলনেই পুজোপ্রাঙ্গণে থাকবেন মা দুর্গার মৃন্ময়ী রূপ।” অমৃতবাবু জানালেন, মণ্ডপের কাঠামো তৈরি হচ্ছে টুসু উৎসবের আঙিনার মতো। চৌদল বা চতুর্দোলা হল মণ্ডপসজ্জার উপকরণ।
তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীনের এ বারের থিমের সমগ্র পরিকল্পনা গোপাল পোদ্দারের। রূপায়ণের দায়িত্বও তাঁর। আবহসংগীতে সুর দিয়েছেন পণ্ডিত তন্ময় বোস। কণ্ঠ দিয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র। তথ্যানুসন্ধান ও সংগীত রচনা করেছেন সোনালি চক্রবর্তী। প্রতিমা গড়ছেন প্রদীপ রুদ্র পাল। মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন বিপিন দেবশর্মা ও তাঁর সম্প্রদায় এবং আলোতে দীনেশ পোদ্দার।
আরও পড়ুন
২১তম বর্ষে কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন ‘শুভ বিজয়া’ জানাচ্ছে সকলকে
ঢাকুরিয়া শহিদনগর সর্বজনীনের ৭৪তম বছরে থিম ‘পদ্মালয়ে পদার্পণ’