নিজস্ব প্রতিনিধি: ঢাকুরিয়া শহিদনগর সর্বজনীন পুজো কমিটির দুর্গাপূজা এ বার ৭৪তম বছরে পড়ল। এ বছর পুজোর থিম ‘পদ্মালয়ে পদার্পণ’।
কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। পুজো হোক কিংবা অন্য কোনো পার্বণ, সব ক্ষেত্রেই ‘প’ বর্ণের খেলা চলে। ঢাকুরিয়া শহিদনগর সর্বজনীনের থিমের মধ্যেও রয়েছে ‘প’ বর্ণের খেলা – ‘পদ্মালয়ে পদার্পণ’।
কিন্তু শুধু ‘পদ্মালয়ে পদার্পণ’ কেন, ‘পুজো’ শব্দটাতেই আছে ‘প’। আর ‘প’-কে কেন্দ্র করেই তো সেজে উঠেছে সমগ্র পুজোমণ্ডপ। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পট, পাখা, পুতুল, পদ্ম, প্রদীপ, পাঁচালি, পার্বণ – এ সবই মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করছেন শিল্পী মানস রায়। তিনিই সামগ্রিক পরিকল্পনা ও সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিমা গড়ছেন সনাতন পাল। আবহ তৈরি করেছেন ‘ক্যাকটাস’ বাংলা ব্যান্ডের সিধু। আর আলোর দায়িত্বে রয়েছেন দেবাশিস দাস।
তৈরি হচ্ছে ‘যো’ পুতুল।
মানসবাবু জানালেন, মণ্ডপসজ্জায় তিনি পিংলার পটচিত্র, বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী ‘রানি’ পুতুল বা ‘যো’ পুতুল ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়াও ব্যবহার করা হচ্ছে তালপাতার পাখা, মাটির প্রদীপ।
তাঁর কথায়, “মণ্ডপের শুরুতে থাকছে পুজোপার্বণ। তার পরেই থাকছে কমলকাননে পাঁচালি। এর পরের ধাপে বাঙালির বিভিন্ন পার্বণ যেমন হালখাতা, জামাইষষ্ঠী, শীতলাপুজো, সত্যনারায়ণ পুজো ইত্যাদি পটচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। একেবারে ভেতরের অংশে থাকবে ‘পদ্মালয়’, যেটি সাজানো হবে পুতুল আর পাখা দিয়ে। পুরো ইকোফ্রেন্ডলি মণ্ডপ হচ্ছে।”
এই তালপাতার পাখাও থাকবে মণ্ডপসজ্জায়।
পুজো করার পাশাপাশি সারা বছরই নানা সামাজিক কাজকর্ম করে শহিদনগর সর্বজনীন পুজো কমিটি। এই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই পুজোর সময়েও প্রান্তিক শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ তারা। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হবে ‘যো’ বা ‘রানি’ পুতুল। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ইত্যাদি দু-একটি জেলার ঐতিহ্যবাহী এই পুতুল আজ বিলুপ্তির পথে। সামান্য যে দু-এক ঘর শিল্পী আছেন তাঁরা এখনও নিপুণভাবে এই পুতুল তৈরি করে চলেছেন। এ রকমই দুই পুতুলশিল্পী সুব্রত পাল ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা পাল এসেছেন হাওড়ার আমতার উদং বাজার অঞ্চল থেকে।
পটচিত্রে সাজবে মণ্ডপ।
এ ছাড়াও মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হবে পিংলার পটচিত্রশিল্পী অমিত চিত্রকরের আঁকা নানান পটচিত্র। তুলির ছোঁয়ায় পটচিত্রে ফুটে উঠবে বাংলার নানান পুজো, পার্বণ ও পাঁচালি। এ ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের বিড়লাপুরের বাসিন্দা শেখ আবুকালাম ও শেখ আনিসুরের পরিবারের তৈরি অসাধারণ তালপাতার পাখা ব্যবহার করা হবে মণ্ডপসজ্জায়।
ছবি: রাজীব বসু
আরও পড়ুন
পাহাড় বাঁচানোর আবেদন নিয়ে বেলেঘাটা ৩৩ নং পল্লীবাসী বৃন্দের পুজোর থিম ’শৈলার্তি’
‘ঋতুমতী, এসো পূর্ণ করো’, এ বারের পুজোয় সামাজিক বার্তা দিচ্ছে পাথুরিয়াঘাটা পাঁচের পল্লী