বেঙ্গালুরুতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকের শেষ দিনে জোটের নতুন নাম প্রকাশ। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক রুদ্ধদ্বার আলোচনার আগে বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দল নৈশভোজে মিলিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট তৈরির জন্য বিরোধী দলগুলির দ্বিতীয় বৈঠক ছিল এটি। এর আগে, গত মাসে পটনায় মিলিত হয়েছিল ১৭টি দল। এ দিনের বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হয়, এর পর মুম্বইয়ে মিলিত হবে দলগুলি।
কেন ‘ইন্ডিয়া’?
বৈঠক শেষ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে নয়া জোটের নাম ঘোষণা করেন। জোটের নতুন নাম ঘোষণা নিয়ে শিবসেনা (ইউবিটি) নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী টুইটারে লেখেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই হবে “টিম ইন্ডিয়া এবং টিম এনডিএ”-এর মধ্যে।
বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ রাখার ব্যাপারে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “এই লড়াই ভারতের দুটি ভিন্ন ধারণা নিয়ে… দেশের কণ্ঠকে চেপে রাখা হচ্ছে। এই লড়াই দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য। তাই ‘ইন্ডিয়া’ নামটি বেছে নেওয়া হয়েছে”।
অন্য দিকে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘‘এনডিএ কি পারবে ইন্ডিয়া (বিরোধীদের নয়া জোট)-কে চ্যালেঞ্জ করতে? বিজেপি কি পারবে?’’
কেমন হল বৈঠক?
বৈঠক শেষে রাহুল গান্ধী বলেন, “আমরা সংবিধান, ভারতীয়দের কণ্ঠস্বর এবং ভারতের ধারণাকে রক্ষা করছি। সকলেই জানে, ভারতের ধারণার বিরুদ্ধে যে লড়াই করতে চায় তার কী হয়… লড়াইটি এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া (আইএনডিআইএ), নরেন্দ্র মোদী বনাম ইন্ডিয়া। ভারত সব সময় সব লড়াইয়ে জয়ী হয়।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৈঠকটি খুব ভালো, গঠনমূলক, ফলপ্রসূ হয়েছে। মুম্বইয়ের পরবর্তী বৈঠকটিতে একটি সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচির উপরও ফোকাস করা হবে”। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এ দিন রাহুল গান্ধীকে “আমাদের প্রিয়” বলে সম্বোধন করেন মমতা।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-বিরোধী সমমনস্ক দলগুলি যাতে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়ে এগোতে পারে, তার জন্য বেঙ্গালুরুতে সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে। অভিন্ন কর্মসূচির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একটি পৃথক কমিটি গঠন করা হতে পারে। তিনি আরও জানান, বেঙ্গালুরুর পরের বৈঠক হতে চলেছে মুম্বইয়ে।
জোটের যৌথ বিবৃতি
বৈঠকের সমাপ্তির পর, একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছেন বিরোধী নেতারা। যেখানে তাঁরা “জাতির কাছে একটি বিকল্প রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক এজেন্ডা উপস্থাপন করার” প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের ২৬টি প্রগতিশীল দল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ভারতের ধারণাকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগোচ্ছে”। মণিপুরের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলা হয়েছে, “আমরা এই দুঃখজনক ঘটনা জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এ ধরনের ঘটনা মণিপুরকে ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা আশ্চর্যজনক এবং নজিরবিহীন।”
পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে, বিজেপি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। রাজ্য সরকারের অধিকারের উপর লাগাতার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর বিরোধীরা।
বিবৃতি অনুসারে, বিরোধীরা নেতারা বলেছেন, তাঁরা দেশের শাসন ব্যবস্থাকে আরও “পরামর্শমূলক, গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক” করে গড়ে তুলতে চান। অন্য দিকে বিজেপি-কে একহাত নিয়ে বলেছেন, “কেন্দ্রের শাসক দলের লক্ষ্য হল নিপীড়ন এবং দমন। ঘৃণা ছড়ানোর রাজনীতি করছে বিজেপি”।
আরও পড়ুন: প্রয়াত কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমেন চাণ্ডি, ক্যানসারে ভুগছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা