শ্রয়ণ সেন
কলকাতার ইতিহাসে উষ্ণতম দিন ছিল ১৯৫৮ সালের ২৮ মে। সে দিন পারদ উঠেছিল ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এপ্রিলে কলকাতার উষ্ণতম দিন ছিল ১৯৪৫ সালের ১৯ এপ্রিল। পারদ উঠেছিল ৪৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এ ছাড়া কলকাতায় আরও দু’বার ৪৩-এর মাত্রা পার করেছিল পারদ। তার মধ্যে একটা ১৯৭৮ সালের ৩ জুন। সে দিন তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর অন্যটা সাম্প্রতিককালে, ২০০২ সালের ২০ মে। সে দিন কলকাতায় তাপমাত্রা ৪৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
শেষবার কলকাতার পারদ ৪২ পেরিয়েছিল ২০০৯ সালের ৯ মে। সে দিন তাপমাত্রা ছিল ৪২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ১০ বছরের মধ্যে এপ্রিলে সব থেকে বেশি গরম রেকর্ড করা হয় ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল (৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিলে (৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
সাম্প্রতিককালে দক্ষিণবঙ্গে রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছিল পুরুলিয়া। ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল। সে দিন সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এত সব পরিসংখ্যানের কথা কেন বললাম? কারণ আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত গরমের যে তীব্র দাপট শুরু হতে চলেছে, তাতে সব না হলেও কিছু রেকর্ড যে ভেঙে যাবে তা বলাই বাহুল্য।
আগামী সপ্তাহের বুধবার পর্যন্ত কলকাতার তাপমাত্রা চল্লিশের ওপরে থাকবে। কিন্তু তার মধ্যেও রেকর্ডভাঙা গরমের আশঙ্কা করা হচ্ছে রবিবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে। ওই তিন দিন কলকাতার তাপমাত্রা বেয়াল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা ছাড়াতে পারে।
‘আরবান হিট আইল্যান্ড’-এর কারণে কলকাতায় গরমের অনুভূতি অন্যান্য জেলার থেকে অনেকটাই বেশি। পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় দিনের বেলায় ৪৬-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পারদ উঠলেও রোদ কমে গেলেই দ্রুত তাপমাত্রা কমতে থাকে। কিন্তু কলকাতায় সেটা হওয়ার উপায় নেই। ফলে এখানে গরম আরও অসহনীয় হয়ে উঠবে।
গরমে দক্ষিণবঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা জলীয় বাষ্পভরা বাতাসই বেশি পরিচিত। এই হাওয়ার ফলে আর্দ্রতা বাড়ে, ঘাম বেশি হয়। কিন্তু তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু এবার হচ্ছে উলটোটা। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার উপকূলীয় অঞ্চল বাদ দিয়ে দিনের বেলায় কোথাও সেই দখিনা হাওয়া ঢুকতেই পারছে না। এর ফলে মধ্য ভারতের চূড়ান্ত গরম হাওয়া উত্তরপশ্চিম দিক দিয়ে ঢুকে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের বায়ুমণ্ডলে। যার ফলে এই রকম শুকনো গরমের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আপাতত এই শুকনো গরম হাওয়া থেকে কোনো নিস্তার নেই। ফলে গরমের দাপট আরও বাড়তে চলেছে। তবে টানেলের শেষে সব সময় আলো দেখা যায়। এই তাপপ্রবাহের শেষের দিনটাও দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত ১ মে থেকে কমবে পারদ। ৩ মে থেকে শেষ হবে তাপপ্রবাহ। তার পর শুরু হবে ঝড়বৃষ্টির পালা।
আরও পড়ুন
তাপপ্রবাহের শেষে কালবৈশাখী, কিন্তু কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা আদৌ বৃষ্টি পাবে তো?