নিউজিল্যান্ড: ৪০১-৬ (রাচিন রবীন্দ্র ১০৮, কেন উইলিয়ামসন ৯৫, মোহম্মদ ওয়াসিম ৩-৬০)
পাকিস্তান: ২০০-১ (ফখর জমান ১২৬ নট আউট, বাবর আজম ৬৬ নট আউট, টিম সাউদি ১-২৭)
বেঙ্গালুরু: এ বারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল পাকিস্তান। বৃষ্টিবিঘ্নিত যে ম্যাচে দুই দলই রানের বন্যা ছোটাল, সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ডিএলএস-এ হার স্বীকার করে নিল নিউজিল্যান্ড। তারা পরাজিত হল ২১ রানে। দুটি দলই ৭ ম্যাচ থেকে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করল। কিন্তু নেট রানরেটের বিচারে নিউজিল্যান্ড থাকল প্রথম চারের শেষ দল হিসাবে। আর পাকিস্তান থাকল পঞ্চম স্থানে।
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠায় পাকিস্তান। সেই সুযোগ পুরো সদ্ব্যবহার করে কিউয়িরা। খুব সহজেই পাকিস্তানের অতি সাধারণ বোলিং-এর মোকাবিলা করে তারা। রাচিন রবীন্দ্র এ বারের বিশ্বকাপে তাঁর তিন নম্বর সেঞ্চুরিটি করেন আর উইলিয়ামসন মাত্র ৫ রানের জন্য শতরানে বঞ্চিত হন। নিউজিল্যান্ড তোলে ৬ উইকেটে ৪০১। বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ রান।‘
কিন্তু পাকিস্তান যে এ ভাবে রান তাড়া করবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি কিউয়িরা। ফখর জমানের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভর করে পাকিস্তান ২৫.৩ ওভারে ১ উইকেটে ২০০ রান তুলে নেয়। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডাকওয়ার্থ লুইস সিস্টেম প্রয়োগ করা হয় এবং সেই হিসাবে পাকিস্তান ২১ রানে জিতে যায়।
দলে ফিরেই শতরানের দোরগোড়ায় কেন উইলিয়ামসন
গোড়ার দিকে ডেভন কনওয়েকে নিয়ে ইনিংস শুরু করে কিছুটা ধীরেসুস্থে খেলতে থাকেন কেন উইলিয়ামসন। দলের অধিনায়ক উইলিয়ামসন ফিরে আসায় এ দিন নিউজিল্যান্ডের মানসিক জোর বেড়ে যায়। দলের ৬৮ রানের মাথায় হাসান আলির বলে মোহম্মদ রিজওয়ানকে ক্যাচ দিয়ে কনওয়ে ফিরে যেতেই খেলার চেহারা পালটে যায়।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাচিন রবীন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে ঝড় তোলেন কেন উইলিয়ামসন। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে তাঁরা যোগ করেন ১৮০ রান ২৩.৩ ওভারে। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য, সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান আগেই তিনি থেমে যান। ইফতিকার আহমেদের বলে ৬ মেরে শতরান করতে চেয়েছিলেন উইলিয়ামসন। লং অফ-এর উপর দিয়ে বল সোজা তুলে দিলেন উইলিয়ামসন। একেবারে সীমানার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ফখর জমান ক্যাচ ধরেন। ৭৯ বলে ৯৫ রান করে উইলিয়ামসন যখন প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তখন দলের রান ২৪৮।
এর আগেই অবশ্য রাচিন এ বারের বিশ্বকাপে তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরিটি করে ফেলেন। মোহম্মদ ওয়াসিমের বল ফাইন লেগে পাঠিয়ে ১০০ রান পূর্ণ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৯৪ বলে ১০৮ রান করে ওয়াসিমেরই বলে সাউদ সকিলকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরে রাচিন। দলের ২৬১ রানে রাচিন আউট হয়ে যাওয়ার পর চতুর্থ উইকেটে ড্যারিল মিচেল (১৮ বলে ২৯ রান) ও মার্ক চ্যাপম্যান ৫৭ রান যোগ করেন। এর পর মার্ক চ্যাপম্যান (২৭ বলে ৩৯ রান), গ্লেন ফিলিপস (২৫ বলে ৪১ রান) এবং মিচেল স্যান্টনারের (১৭ বলে ২৬ নট আউট) ব্যাটিং-এর সুবাদে কিউয়িরা পৌঁছে যায় ৪০১ রানে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রান করে নিউজিল্যান্ড। এ বারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
২১ রানে জিতল পাকিস্তান
জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই বিপাকে পড়ে পাকিস্তান। ৪ রান করে দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যান আবদুল্লাহ শফিক। দলের রান তখন ৬। আর-এক ওপেনার ফখর জমানের সঙ্গী হন অধিনায়ক বাবর আজম। ঝড় ওঠে দু’জনের ব্যাটে, বিশেষ করে জমানের ব্যাটে। কিউয়িদের আক্রমণকে তুরি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তাঁরা রান করে যেতে থাকেন। একসময় মনে হচ্ছিল তাঁরা জেতার জন্যই এসেছেন।
২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্যান্টনারকে ১ রান নিয়ে নিজের শতরান পূর্ণ করেন জমান। পাকিস্তান যখন ১ উইকেটে ১৬০, তখন বৃষ্টি নামে। ডিএলএস-এ হিসেব করে দেখা যায়, বৃষ্টির জন্য খেলা যদি ভেসতে যায়, তা হলে ২১.৩ ওভারে ১৫০ রান করলে পাকিস্তান জিতবে। পাকিস্তানের ইতিমধ্যেই ১৬০ করে ফেলেছে।
খেলা আবার শুরু হয় সন্ধে ৬.২০ মিনিটে। ৪১ ওভারের ম্যাচ করে দেওয়া হয়। ৩৪২ করতে পারলে পাকিস্তান জিতবে। পাকিস্তান আবার ব্যাটিং শুরু করে। কিন্তু মাত্র ৪ ওভার খেলা হতে আবার বৃষ্টি নামে। তখন হিসাব করে দেখা যায়, খেলা যদি আর না হয় তখন ডিএলএস প্রয়োগ করা হলে পাকিস্তান ২১ রানে জিতবে। তা-ই হয়। শেষ পর্যন্ত সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ ম্যাচ শেষ বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে ২১ রানে জিতে যায় পাকিস্তান। ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন ফখর জমান।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ম্যাচে চোট পাওয়ার জের, বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকেই গেলেন হার্দিক পাণ্ড্য
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: ডাচদের হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক, সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে থাকল আফগানরা