পাকিস্তান: ২৭০ (৪৬.৪ ওভার) (সাউদ শকিল ৫২, বাবর আজম ৫০, তাবরাইজ শামসি ৪-৬০, মার্কো জ্যানসেন ৩-৪৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৭১-৯ (৪৭.২ ওভার) (আইডেন মার্করাম ৯১, শাহিন শাহ আফ্রিদি ৩-৪৫, উসামা মির ২-৪৫)
চেন্নাই: মোহম্মদ নওয়াজের বল স্কোয়ার লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে কেশব মহারাজ যখন জয়ের আনন্দে উল্লসিত, তখনই দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। অবশেষে জয় এল। পাকিস্তানের দেওয়া ২৭১ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে সারা ম্যাচটা ধরে বোঝা যায়নি কে জিতবে। ২৬০ রানে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার নবম উইকেট পড়ে গেল, তখন তো মনে হয়েছিল পাকিস্তান এ দিন একটা গুরুত্বপূর্ণ জয় পাবে। কিন্তু বিধি বাম!
মাত্র ৯ রানের জন্য শতরান থেকে বঞ্চিত হলেন আইডেন মার্করাম। তবে দলকে জয় থেকে বঞ্চিত করলেন না। বলা যায়, তাঁরই ব্যাটিং-এর গুণে দক্ষিণ আফ্রিকা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ১ উইকেটে হারাল পাকিস্তানকে। ৬০ রানে ৪ উইকেট দখল করে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তাবরাইজ শামসি।
এই জয়ের ফলে লিগ টেবিলে দক্ষিণ আফ্রিকা চলে গেল শীর্ষ স্থানে। ৬টি ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট। ভারত একই পয়েন্টে থাকলেও নেট রানরেটের বিচারে দক্ষিণ আফ্রিকা শীর্ষে থাকল। তবে ভারত কিন্তু ১টা ম্যাচ কম খেলেছে। আর এ দিনের হারের পরেও পাকিস্তান ষষ্ঠ স্থানেই থাকল।
২৭১ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিল পাকিস্তান
শুক্রবার চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে পাকিস্তান ব্যাট করতে নামে। শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি তাদের। ৩৮ রানের মধ্যে দুটি উইকেট পড়ে যায়। তৃতীয় উইকেটে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন দলের অধিনায়ক বাবর আজম এবং মোহম্মদ রিজওয়ান। ২৭ বলে ৩১ রান করে গেরাল্ড কোয়েৎসির বলে কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দিয়ে রিজওয়ান যখন আউট হন, দলের রান তখন ৮৬। এর পর ১৪১ রানের মধ্যে আরও দুটি উইকেট পড়ে যায়। দলের ১৪১ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ে। ৬৫ বলে ৫০ রান করে তাবরাইজ শামসির বলে ডি কককে ক্যাচ দিয়ে আউট হন আজম।
ষষ্ঠ উইকেটে আবার ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। সাউদ শকিল এবং শদব খানের জুটি যোগ করে ৮৪ রান। দলের ২২৫ রানে আউট হন শদব খান। অর্ধশত রান থেকে ৭ রান দূরে থেকে কোয়েৎসির বলে কেশব মহারাজকে ক্যাচ দিয়ে তিনি প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। দলের শেষ ৪ উইকেট ৪৫ রানের মধ্যে পড়ে যায়। সাউদ শকিল করেন ৬২ বলে ৫২ রান। তাঁকে তুলে নেন শামসি। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৩.২ ওভার বাকি থাকতেই পাকিস্তান ২৭০ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ৬০ রান দিয়ে ৪ উইকেট দখল করেন তাবরাইজ শামসি এবং ৪৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন মার্কো জ্যানসেন।
সমানে সমানে লড়াইয়ের পর এল জয়
জয়ের জন্য ২৭১ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম উইকেট হারায় ৩৪ রানে। দলের উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক শুরুতেই ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে টিকলেন না। ১৪ বলে ২৪ রান করে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে মোহম্মদ ওয়াসিমকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ রান যোগ হওয়ার পর আরেক ওপেনার টেম্বা বাভুমা (২৭ বলে ২৮ রান) ওয়াসিমের বলে সাউদ শকিলকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান।
নিয়মিত ব্যবধানেই উইকেট পড়তে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকার। তৃতীয় ও চতুর্থ উইকেট পড়ে ১২১ ও ১৩৬ রানে। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম উইকেটের জুটি উইকেট পতন কিছুটা আটকায়। আইডেন মার্করাম এবং ডেভিড মিলার পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ৭০ রান। দলের ২০৬ রানে ডেভিড মিলার আউট হতে ধস নামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে। আরও তিনটি উইকেট পড়ে যায় ৪৪ রানের মধ্যে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইডেন মার্করামের উইকেট। ৯৩ বলে ৯১ রান করে উসামা মিরের বলে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমকে ক্যাচ দিয়ে সম্ভাব্য শতরান মাঠে রেখে এসে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মার্করাম। দলের রান তখন ২৫০।
২৫০ রানেই অষ্টম উইকেট পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার। আউট হন গেরাল্ড কোয়েৎসি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে মোহম্মদ রিজওয়ানকে ক্যাচ দেন তিনি। ক্রিকেটপ্রেমীরা তখন দোলাচলে। বুঝতে পারছেন না, কার কপালে জয়তিলক পরিয়ে দেবেন ভাগ্যবিধাতা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার একটা সুবিধা ছিল। তাদের হাতে ছিল অনেক বল – ৫৩ বলে তাদের করতে হবে ২১ রান।
২৬০ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার নবম উইকেট পড়ে গেল। পাকিস্তান শিবিরে উল্লাস। কিন্তু শেষ উইকেটের জুটিতে কেশব মহারাজ এবং তাবরাইজ সামশি মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দিলেন। সমানে সমানে লড়াই করে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল ১ উইকেটে।
আরও পড়ুন
শনিবার মুখোমুখি বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস, ইউনিসেফের উদ্যোগে ইডেনে এক অভিনব অনুশীলনে সাকিবরা
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের আবার হার, ২৫.৪ ওভারেই জিতে গেল শ্রীলঙ্কা