বেঙ্গালুরুর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগে শোরগোল পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের এক গৃহকর্মী ও তাঁর স্বামীকে নৃশংসভাবে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বেঙ্গালুরু পুলিশের বিরুদ্ধে। চুরির অভিযোগে আটক করে তাঁদের তিন ঘণ্টা ধরে বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা।
অভিযুক্ত গৃহকর্মী, ৩৪ বছর বয়সি সুন্দরি বিবি, তাঁর অভিযোগ করেছেন কর্ণাটক স্টেট হিউম্যান রাইটস কমিশনে। অভিযোগ, গত ৩০ অক্টোবর সকাল ৯টা নাগাদ বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানায় তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে (যিনি ব্রুহত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকায় বা BBMP-তে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করেন) থানার প্রথম তলায় নিয়ে গিয়ে চারজন পুরুষ ও তিনজন মহিলা পুলিশ মিলে নির্মমভাবে মারধর করেন।
সুন্দরি বিবির অভিযোগ, “আমার কর্মস্থল শোভাব অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় একদিন ১০০ টাকার একটি নোট পাই। সেটি আমি মালিককে ফেরত দিতে যাচ্ছিলাম, যা সিসিটিভিতেও দেখা গেছে। কিন্তু মালিক ফুটেজ দেখে আমার হাত ধরে চুরির অভিযোগ করেন। পরে দাবি করেন, তাঁর একটি ডায়মন্ড রিং হারিয়েছে, সেটিও আমি চুরি করেছি।”
তিনি জানান, তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং স্বামীকে ডাকা হয়। এরপর দু’জনকেই নির্মমভাবে পেটানো হয়।
“আমি চিৎকার করছিলাম, আশেপাশের লোকেরা শুনে সমাজকর্মী আর. কালিমুল্লা-কে খবর দেন। তাঁর হস্তক্ষেপেই পুলিশ মারধর বন্ধ করে লাঠি লুকিয়ে ফেলে,” বলেন সুন্দরি।
অভিযোগ, তাঁরা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত থানায় আটকে ছিলেন, এবং পুলিশ তাঁদের হুমকি দেয়—“কাউকে কিছু বললে আবার গ্রেফতার করা হবে।”
নির্যাতনের পর সুন্দরি বিবি জ্বরে ও শরীরব্যথায় ভোগেন। তাঁর কথায়, “ভয়ে আমরা তিন দিন ঘরে লুকিয়ে ছিলাম। পরে কিডনিতে ব্যথা বাড়লে স্বামী পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করেন। তাঁদের পরামর্শে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।” পরে তাঁকে বেঙ্গালুরুর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
বর্তমানে তিনি মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং তাঁকে যাতে আর হয়রানি না করা হয়, নিরাপদে কাজ ও বসবাসের পরিবেশ দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি. পারমেশ্বর বেঙ্গালুরু পুলিশের কমিশনার সীমন্ত কুমার সিং-এর কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছি। যদি পুলিশ দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কমিশনার সীমন্ত কুমার সিং জানিয়েছেন,“মহিলাকে মারধরের অভিযোগ সত্যি, চিকিৎসা নথিও রয়েছে। হোয়াইটফিল্ডের ডেপুটি কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এই ঘটনায় দক্ষিণী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

