Homeউৎসবপুরীর রথযাত্রার চমকপ্রদ ইতিহাস কী? জেনে নিন

পুরীর রথযাত্রার চমকপ্রদ ইতিহাস কী? জেনে নিন

প্রকাশিত

 শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা হিন্দু ধর্মের মানুষদের অন্যতম প্রধান ধর্মকৃত্য। রথোৎসবকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে নানা  আনন্দঘন অনুষ্ঠান এবং মেলা হয়ে থাকে।

তবে পুরীর রথোৎসব বাস্তবিকই আকর্ষণীয়। এই রথ যাত্রার অপর নাম শ্রী গুন্ডিচা যাত্রা বা ঘোষ যাত্রা। আষাঢ়ের শুক্ল দ্বিতীয়া থেকে দশমী পর্যন্ত নয় দিনের এই যাত্রা বিশ্ব প্রসিদ্ধ। প্রতিবছর রথ নতুনভাবে তৈরি করা হয়। ভগবান জগন্নাথ দেবের দ্বাদশ যাত্রার মধ্যে গুন্ডিচা যাত্রা প্রধান। গুন্ডিচা মন্দিরেই বিশ্বকর্মা জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার কাষ্ঠ নির্মিত প্রতিমা তৈরি করেন।

জগন্নথধাম পুরী ঘিরে একাধিক রহস্যময় কাহিনি প্রচলিত রয়েছে । মূলত পুরীর মন্দির ঘিরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রহস্যময় কাহিনিও উঠে এসেছে।

পুরীর রথযাত্রা ঘিরে কোন ইতিহাস রয়েছে। কোন কোন বিশেষ রীতিই বা পালিত হয় এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে, জেনে নেওয়া যাক।

পুরীর রথযাত্রার ইতিহাস-

প্রায় আনুমানিক সাতশো বছরের পুরনো পুরীর রথযাত্রা উৎসব। পুরীর জগন্নাথ মন্দির হল হিন্দুর চার ধামের মধ্যে অন্যতম।

গুন্ডিয়া রথযাত্রার কথা বারবার পুরীর ইতিহাস ঘিরে আসে, শোনা যায়, তিনি একজন মহিলা। পুরাতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদদের মতে, এই গুণ্ডিচা আসলে রাজা ইন্দ্রদ্যুন্মের স্ত্রী। পুরীর এই রাজবংশ আজও বর্তমান। বংশপরম্পরায় রাজা উপাধিতে ভূষিত যাঁরা, তাঁদের হাত ধরেই পুরীর রথযাত্রায় পুষ্পাঞ্চলি প্রদান থেকে, সোনার ঝাড়ু ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ অনুযায়ী সত্যযুগ থেকে চালু হয়েছে এই রথযাত্রা। সেই সময় ওড়িশার নাম ছিল মালব দেশ। সেই সময়কার রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম বিষ্ণুর মন্দির গড়ার স্বপ্ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মন্দির কেমন ভাবে তৈরি হবে, তার নকসাই বা কেমন হবে তা নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না । ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ বলা হয়েছে, মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ শিল্পী তাঁর সামনে দাঁড়ান আর মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন দরজা না খোলে। দরজা বন্ধ করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ।

রথ বা রথের গুরুত্ব-

রথের দিন প্রতিটি রথকে পঞ্চাশ গজ দড়িতে বেঁধে আলাদা আলাদা ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গুণ্ডিচাবাড়ি। রথ নির্মাণের জন্য কাঠের সংগ্রহ বসন্ত পঞ্চমীর দিন থেকেই শুরু হয়। রথের নির্মাণ অক্ষয় তৃতীয়া থেকে শুরু হয়। সেই কাঠ সংগ্রহ করা হয় মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে। আর সেই কাঠগুলি নির্দিষ্ট পরিমাণে কাটা শুরু হয় রামনবমী তিথি থেকে। রথগুলিতে অন্য কোনও ধাতু ব্যবহার করা হয় না। রথের পেরেকও তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। ভগবান জগন্নাথ, ভগবান বলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রা এই তিনটি দেবতাকে উত্সর্গীকৃত তিনটি রথ সম্পূর্ণ করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। ভগবান জগন্নাথের জন্য যে রথ তৈরি করা হয়, তাকে নন্দীঘোষ বলে। এই রথের মোট ১৬টি চাকা। পুরো রথটি লাল-হলুদ কাপড়ে মোড়া হয়। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।

স্নানযাত্রা-

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূর্ণিমাতেই জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। গর্ভগৃহ থেকে মূর্তি তুলে এনে স্নান মণ্ডপে তা স্থাপন করা হয়। সেখানেই সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। স্নানের সঙ্গে সঙ্গে চলে মূর্তির সাজসজ্জা। ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। ভগবান জগন্নাথকে ৩৫টি সোনার কলসি, ভগবান বলরামকে ২২টি সোনার কলস ও সুভদ্রাকে ১৮টি সোনার কলস দিয়ে স্নান করানোর রীতি রয়েছে। এইসময় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন তিনি। রথ পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। তাই সেই সময়টা ভক্তরা জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না। এমনকী, এই কয়েকটা দিন তাঁর পুজোও হয় না।

কোন তিথি নির্ধারিত হয় রথ যাত্রার? মন্দির স্থাপন করে জগন্নাথ , বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি তৈরি ঘিরে বিশ্বকর্মাকে অসন্তুষ্ট করে ফেলেন ইন্দ্রদ্যুন্ম। যার জেরে দেবদেবীদের সম্পূর্ণ মূর্তি নির্মাণ না করেই চলে যেতে হয় বিশ্ব কর্মাকে। এদিকে, কথিত রয়েছে, যে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখতে যান জগন্নাথদেব। সেই উপলক্ষ্যে ওই তিথি মেনে গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আয়োজন হয়। এই যাত্রাকে সোজা রথ যাত্রা বলা হয়। এরপর সাত দিন পর মন্দির থেকে দেবতার ফিরতি যাত্রাকে উল্টোরথ যাত্রা বলা হয়। যদিও মাসির বাড়ি যাওয়া নিয়ে রথ যাত্রার আরও এতটি পৌরাণিক কাহিনিও শোনা যায়।

উৎসবের খবরের আপডেট পেতে পড়ুন খবর অনলাইন


সাম্প্রতিকতম

সুচিত্রা-কণিকার জন্মশতবর্ষে ‘বৈতালিক’-এর শ্রদ্ধাঞ্জলি, মন ছুঁয়ে যাওয়া পরিবেশনা ‘দুই কন্যা’  

শম্ভু সেন পিঠোপিঠি দুই কন্যা। বয়সের তফাত এক মাসও নয়। একজনের জন্ম ১৯২৪-এর সেপ্টেম্বরে, অন্যজনের...

বাংলার ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ শেষ কবে? বৃষ্টি কবে থেকে?

শ্রয়ণ সেন অতীতে কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গে গরমের পারদ যে যে রেকর্ড তৈরি করেছে, এখনও পর্যন্ত...

৬০ বছর বয়সে মাথায় উঠল মিস ইউনিভার্স বুয়েনস আইরেসের মুকুট, জেনে নিন আলেজান্দ্রা মারিসা রদ্রিগেজের সম্পর্কে

এর আগে থেকে ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সি কোনও মহিলা এই প্রতিযোগিতার অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে বয়স সীমা তুলে নেওয়া হয়। তার পরই তাঁর এই জয় আসে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেই সোমবার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি

রাজ্যের পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সেই সব মামলার শুনানি হবে সোমবার।

আরও পড়ুন

বড়দিনে উৎসব মুখর কলকাতা, ভিড় উপচে পড়ল পার্ক স্ট্রিট থেকে চিড়িয়াখানায়

কলকাতা: বড়দিনে জনসমুদ্র উপচে পড়ল পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায়। বড়দিনের রাতে পার্ক স্ট্রিটের ভিড় যেন...

রাখি বন্ধন উৎসবে বাড়িতে বানাতে পারেন এই ৪ রকমের রাখি, কীভাবে বানাবেন জেনে নিন

রাখি বন্ধন উৎসব প্রায় এসেই গেল। ভাই-বোনের ভালোবাসার প্রতীক রাখি বন্ধন উৎসব। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় এই উৎসব পালিত হয়। রাখি উপলক্ষে বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাখি কিনতে পাওয়া যায়।

রাখিবন্ধনে উৎসবে কী ভূমিকা শ্রীকৃষ্ণ ও দ্রৌপদী, শুভ ও লাভ, যম ও যমুনার? এই অজানা কাহিনীগুলি কী জানেন?  

রাখি পূর্ণিমার পবিত্র উৎসব হল ভারতীয় উপমহাদেশের ভাই বোনের প্রেম প্রীতির অন্যতম বন্ধন উৎসব। এই উৎসব যত না উৎসবের আনন্দ তার চেয়েও অনেক বেশি দায়িত্বের।