ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর এবার সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নামতে চলেছেন তাঁর নতুন দল ‘জন সূরজ’-এর মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে ভোটকুশলী হিসাবে কাজ করে আসা পিকে এবার নিজেই রাজনৈতিক দল গড়ে ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রবিবার তিনি ঘোষণা করেছেন, তাঁর দল ‘জন সূরজ’ ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ২৪৩টি আসনের প্রতিটিতেই প্রার্থী দেবে। বিশেষভাবে নারীশক্তিকে গুরুত্ব দিতে চান তিনি, এবং সেই লক্ষ্যে দলের প্রাথমিক ধাপে ৪০টি আসনে মহিলা প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
‘জন সূরজ অভিযান’ থেকে ‘জন সূরজ’ পার্টি
প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক পথচলার শুরু হয়েছিল ‘জন সূরজ অভিযান’ নামে। প্রথমে রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত না হলেও, পরে তিনি নিজেই জন সূরজকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ইঙ্গিত দেন। পিকে জানিয়েছেন, আগামী ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর দল আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। বিহারের প্রতিটি বিধানসভা আসনে প্রার্থী দেওয়ার মাধ্যমে তিনি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছেন।
মহিলা প্রার্থীতে জোর
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দলের প্রথম ধাপে ৪০টি আসনে মহিলা প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে ভবিষ্যতে মহিলাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে পিকের। তিনি বলেছেন, ২০৩০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘জন সূরজ’ থেকে ৭০-৮০ জন মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশান্ত কিশোর মহিলাদের ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা দিতে চান।
কেমন হবে কেন্দ্রীয় কমিটি
একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমাজের প্রতিটি শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকবে মোট ২৫ জন সদস্য। বিশেষভাবে, সাধারণ শ্রেণি, অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণি (ওবিসি), অত্যন্ত পশ্চাৎপদ শ্রেণি (ইবিসি), দলিত এবং সংখ্যালঘু— এই পাঁচটি শ্রেণি থেকে সমানভাবে পাঁচজন করে প্রতিনিধি রাখা হবে। বিহারের রাজনীতিতে যাদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ভূমিহার, ব্রাহ্মণ, রাজপুত, যাদব, দলিত এবং সংখ্যালঘুদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তাদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে কমপক্ষে ৫,০০০ প্রস্তাবকের সমর্থন প্রয়োজন হবে। এতে বোঝা যায় যে, প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সূরজ’ দল জনগণের বৃহত্তর অংশের সহায়তা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
নেতার মেয়াদ ১ বছর
কেন্দ্রীয় কমিটির ২৫ জন সদস্য মিলে দলের নেতা নির্বাচন করবেন। দলের নেতার মেয়াদ হবে ১ বছর। প্রথম দফায় দলের নেতৃত্ব কোনও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির হাতে থাকবে। এরপর অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষদের পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে প্রশান্ত কিশোর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দলের নেতৃত্বের অংশ হবেন না। কিন্তু তিনি ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে তুলতে চান।
প্রশান্ত কিশোরের নতুন দল নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতিতে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। পিকে নিজেও জানিয়েছেন, তাঁর রাজনৈতিক মঞ্চটি নতুন পরিবর্তনকে সমর্থন করা ব্যক্তিদের জন্য। ‘জন সূরজ’-এর মাধ্যমে প্রশান্ত কিশোর বিহারের রাজনীতিতে নতুন বাতাবরণ তৈরি করতে কতটা সফল হবেন, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশ।
৭৮% ডেলিভারি কর্মীর বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার নীচে, কর নিয়ে সচেতনতা কম, বলছে সমীক্ষা