ভারত ৩৯৯ (শ্রেয়স আইয়ার ১০৫, শুভমন গিল ১০৪, সূর্যকুমার যাদব ৭২ নট আউট, কেপি রাহুল ৫২)
অস্ট্রেলিয়া ২১৭ (২৮.২ ওভারে) (সিয়ান অ্যাবট ৫৪, ডেভিড ওয়ার্নার ৫৩, রবিচন্দ্র অশ্বিন ৩-৪১, রবীন্দ্র জাদেজা (৩-৪২)
ইন্দৌর: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচের সিরিজ পকেটে পুরে নিল ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজে পর পর দুটি ম্যাচ জিতে নিল ভারত। রবিবার ইন্দৌরের হোলকার স্টেডিয়ামে আয়োজিত দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত ৯৯ রানে (ডাকওয়ার্থ-লুইস সিস্টেমের হিসাবে) হারাল অস্ট্রেলিয়াকে।
টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। নির্দিষ্ট ৫০ ওভারে ৩৯৯ রান করে ভারত। শুভমন গিল এবং শ্রেয়স আইয়ার শতরান করেন। শুভমন গিল একটি ক্যালেন্ডার বর্ষে ৫টি সেঞ্চুরি করলেন। সর্বমোট ৬টি সেঞ্চুরি একদিনের ম্যাচে। অর্ধশত রানের গণ্ডি পেরিয়ে যান সূর্যকুমার যাদব ও কেপি রাহুল। সূর্যকুমার নট আউট থাকেন ৭২ রানে। অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলারই ভারতের কার্যত কোনো ব্যাটারকেই বেগ দিতে পারেননি।
এই ম্যাচে বৃষ্টি দু’ বার বিঘ্ন ঘটায়। প্রথম বার ভারতের ইনিংসের সময় এবং দ্বিতীয় বার অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সময়। দ্বিতীয় বারের বৃষ্টির পর ডাকওয়ার্থ-লুইস সিস্টেমে (ডিএলএস) অস্ট্রেলিয়ার জন্য জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয় ৩৩ ওভারে ৩১৭। লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ২৮.২ ওভারে ২১৭ রানে অস্ট্রেলিয়া সব উইকেট হারায়। রবিচন্দ্র অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজার স্পিনের কাছে হার মানে অস্ট্রেলিয়া।
ভারতের দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ২০০
ভারতের শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি। ১৬ রানে দলের প্রথম উইকেট পড়ে যায়। ঋতুরাজ গায়কোয়াড় মাত্র ৮ রান করে জোশ হ্যাজেলউডের বলে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। শুভমন গিলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শ্রেয়স আইয়ার। শুরু হয় তাণ্ডব। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে যোগ হয় ২০০ রান ১৬৪ বলে। ভারতের ৯.৫ ওভার খেলার পর বৃষ্টি নামে। প্রায় ৪৫ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়।
শ্রেয়স আইয়ার প্রথম ম্যাচে ৩ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এই ম্যাচে তাঁর প্রথম ১৪ বলে ৫টি চার মারেন। ইতিমধ্যে শুভমনও তাঁর ছন্দ ফিরে পান। এবং ৩৭ বলে অর্ধশত রান করেন। শ্রেয়সও পিছিয়ে ছিলেন না। তিনিও ৪১ বলে ৫০ রান করেন। একাদশ ওভার থেকে ২০তম ওভার পর্যন্ত শুভমন-শ্রেয়স জুটি ওভারপিছু ৭.৮ রান করে করেন।
৩০তম ওভারে শ্রেয়স আইয়ার একদিনের ম্যাচে তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরিটি করেন। দু’ ওভার পরে সেঞ্চুরি করেন শুভমিন গিল। ৯০ বলে ১০৫ রান করে ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে সিয়ান অ্যাবটের বলে ম্যাথু শর্টকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন শ্রেয়স। শুভমনের সঙ্গী হন রাহুল। কিন্তু দলের ২৪৩ রানের মাথায় আউট হন শুভমন। ক্যামেরুন গ্রিনের বলে উইকেটকিপার ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। তাঁর সংগ্রহ ৯৭ বলে ১০৪ রান।
শুভমন গিল (ফাইল চিত্র)।
শেষ ২০ ওভার রাহুল, ঈশান ও সূর্যকুমারের শাসন
ভারতের ইনিংসে প্রথম ৩০ ওভার রাজত্ব করেন শ্রেয়স আইয়ার ও শুভমন গিল। শেষ ২০ ওভার রাজত্ব করেন কেপি রাহুল, ঈশান কিষান এবং সূর্যকুমার যাদব। রাহুল এবং ঈশান দু’ জনেই ছয় মেরে তাঁদের রান নেওয়ার সূচনা করেন। তাঁদের জুটিতে যোগ হয় ৫৯ রান। ১৮ বলে ৩১ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে ঈশান যখন আউট হন তখন দলের স্কোর ৩০২-৪।
জুটি বাঁধেন রাহুল ও সূর্যকুমার যাদব। ৪৪তম ওভারে সূর্যকুমার ৪টি ছয় সহযোগে ২৬ রান করেন। ইতিমধ্যে ৩৫৫ রানে আউট হন রাহুল। ৩৮ বলে ৫২ করে গ্রিনের বলে বোল্ড হন। সূর্যকুমার ও রবীন্দ্র জাদেজা স্কোর টেনে নিয়ে যান ৩৯৯-এ। ৩৭ বলে ৭২ করে সূর্যকুমার এবং ৯ বলে ১৩ করে জাদেজা নট আউট থাকেন। ৩৯৯-এর পথে ভারতীয় ব্যাটাররা ৩১টি চার ও ১৮টি ছয় মারেন।
প্রথম আঘাত হানেন প্রসিধ কৃষ্ণ
রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই ২টো উইকেট খোয়ায় অস্ট্রেলিয়া। জসপ্রীত বুমরাহের পরিবর্ত বোলার প্রসিধ কৃষ্ণ শুরুতেই আঘাত হানেন। দলের দ্বিতীয় ওভার তথা তাঁর প্রথম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে প্রসিধ তুলে নেন ম্যাথু শর্ট ও স্টিভ স্মিথকে। এর পরে খেলা শুরু করেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং মার্নাস লাবুশানে।
ওয়ার্নার এবং লাবুশানের খেলা চলাকালীন আবার বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ওভারের সংখ্যা কমতে থাকে। জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে ডিএলএস প্রয়োগ করা হয়। জানা যায় ৪০ ওভার খেলা হলে লক্ষ্যমাত্রা হবে ৩৫৪, আর ৩৫ ওভার খেলা হলে লক্ষ্যমাত্রা হবে ৩২৮। প্রায় এক ঘণ্টা পরে খেলা শুরু হয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয় ৩৩ ওভারে ৩১৭ রান।
বিধ্বংসী অশ্বিন ও জাদেজা
ওয়ার্নার এবং লাবুশানের জুটি তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৮০ রান। অশ্বিন আর জাদেজার স্পিন সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের। অশ্বিনের বলে বোল্ড হন লাবুশানে। দলের রান তখন ৮৯। মাত্র ১১ রান যোগ হওয়ার পর ওয়ার্নার আউট হয়ে যান অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। চার বল পরে ফের অশ্বিনের ঝুলিতে উইকেট। এলবিডব্লিউ হন জোশ ইংলিশ।
এর পর উইকেট নিতে শুরু করেন রবীন্দ্র জাদেজা। তিনি ৩টি উইকেট পান, তিন জনেই বোল্ড – সিয়ান অ্যাবট, অ্যাডাম জাম্পা এবং জোশ হ্যাজেলউড। নবম উইকেটের জুটিতে ৭৭ রান যোগ করা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া উল্লেখযোগ্য আর কিছু করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২৮.২ ওভারে ২১৭ রানে ইনিংস শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার। ডিএলএস-এর হিসেবে ভারতের জয় হয় ৯৯ রানে।
আরও পড়ুন
এশিয়াড ফুটবল: মায়ানমারের সঙ্গে ১-১ ড্র করে ‘রাউন্ড অফ ১৬’-য় ভারত
এশিয়াড মহিলা ফুটবল: থাইল্যান্ডের কাছে হেরে গেমস থেকে ছিটকে গেল ভারত
এশিয়াড মহিলা ক্রিকেট: বাংলাদেশকে হারিয়ে রুপো নিশ্চিত করল ভারত